Wednesday 17 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাবির দ্বাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

রাবি করেসপন্ডেন্ট
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:১৪ | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৩২

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দ্বাদশ সমাবর্তন।

রাবি: নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দ্বাদশ সমাবর্তন। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় স্টেডিয়ামে এ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবর্তনকে ঘিরে সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল। দীর্ঘদিন পর চিরচেনা ক্যাম্পাসে ফিরে এসে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠেন গ্রাজুয়েটরা। অনেককে দেখা যায় বাবা-মাকে গাউন পরিয়ে দিতে। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, প্যারিস রোড, বুদ্ধিজীবী চত্বর, পরিবহন চত্বর ও স্টেডিয়ামের আশপাশে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রাজুয়েটরা।

সকাল ৯টায় গ্রাজুয়েটরা সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করেন। পরে সাড়ে ৯টায় সমাবর্তন শোভাযাত্রা শেষে আমন্ত্রিত অতিথিরা তাদের আসন গ্রহণ করেন। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে অনুষদ অধিকর্তারা সভাপতির নিকট ডিগ্রি উপস্থাপন করেন। এরপর সমাবর্তন বক্তারা তাদের বক্তব্য দেন। দুপুর ১২টায় সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সমাবর্তনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘দেশ বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে নতুন ও অর্থবহ অগ্রগতির সুযোগ তৈরি করেছে। এই সময়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার ও ন্যায্যতার পক্ষে উচ্চমানের মানবসম্পদ অত্যন্ত প্রয়োজন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সেই লক্ষ্যেই শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শুধু বিষয়জ্ঞানই দেয়নি, বরং চরিত্র গঠন, প্রশ্ন করার সাহস, সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মানসিকতা তৈরি করেছে। নানা অনিশ্চয়তা ও কষ্টের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের অধ্যবসায় ও হাল না ছাড়ার মানসিকতাই তাদের বড় অর্জন।’

উপাচার্য বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে প্রযুক্তিগত বিপ্লব, জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিগ্রির পাশাপাশি প্রয়োজন নীতিবান নেতৃত্ব, উদ্ভাবনী চিন্তা ও দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব। এ জন্য তিনি স্নাতকদের সাহসী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও কর্মে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবর্তন বক্তা ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই গ্র্যাজুয়েটদের অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখা হয়। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এই তরুণ সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। তবে এই পরিবর্তন এখানেই শেষ নয়; প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ওয়ার্ল্ড ক্লাস সিটিজেন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে শিক্ষার্থীদের এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।’

সমাবর্তনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল ইসলাম আবরার বলেন, ‘শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে চিন্তা করলে শুরুতেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা স্যারের আত্মবলিদানের কথা। তার ত্যাগ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শিক্ষার প্রকৃত নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতার নাম। জ্ঞান দায়িত্বের সৃষ্টি করে; আর যখন সমাজ অন্যায়ের মুখোমুখি হয়, তখন শিক্ষিত মানুষের নীরবতা আপোষেরই শামিল।’

তিনি বলেন, ‘আমি কোনো দল করি না, আমি নিরপেক্ষ, শিক্ষিত মানুষের এমন অবস্থান গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অন্যায় যখন সংঘটিত হয়, তখন অবশ্যই একটি অবস্থান নিতে হয়। অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা তার জীবন দিয়ে আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন। তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি নাগরিক মর্যাদাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।’

শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বিগত ১৭ বছরের মতো পরিস্থিতি যেন ভবিষ্যতে আর তৈরি না হয়, সে জন্য শিক্ষার্থীদের সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হিসেবে দেশ ও সমাজের জন্য সক্রিয় ও ইতিবাচক অবদান রাখার আহ্বান জানান তিনি।’

প্রসঙ্গত, এবারের সমাবর্তনে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জনকারী ১২টি অনুষদের মোট ৫ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ৭৯ জনকে পিএইচডি, ১১ জনকে এমফিল এবং ৭৪০ জনকে এমবিবিএস ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

সারাবাংলা/এনএমই/এনজে
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর