বগুড়া: বগুড়ায় ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়া জেলা কার্যালয়। ইসলামী ব্যাংক পিএলসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আফাকু কোল্ড স্টোরেজের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়া জেলা কার্যালয়কে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) আদালত থেকে মামলা তদন্তের জন্য মামলার আরজি ও তদন্তের জন্য একটি চিঠি দেওয়া হয়। এরআগে বগুড়া আফাকু কোল্ড স্টোরেজের পলাতক এমডি’র স্বাক্ষর জাল ও ভূয়া নথি তৈরির ঘটনা ঘটে।
দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘১৭ ডিসেম্বর বগুড়ার আদালত থেকে মামলা তদন্তের জন্য মামলার আরজি ও তদন্তের জন্য একটি চিঠি পেয়েছি। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসম্বের) বিষয়টি নিয়ে আমাদের মিটিং হয়েছে। মিটিং এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিঠিটি ও আরজি ঢাকায় প্রেরন করা হয়েছে। ঢাকা প্রধান কার্যালয় ইচ্ছা করলে তারা নিজেরা তদন্ত করতে পারেন অথবা আমাদেরকে দায়িত্ব দিতে পারেন। দায়িত্ব পেলে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’
জানা যায়, পলাতক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভুয়া উপস্থিতি দেখিয়ে বোর্ড সভার রেজুলেশন, জাল স্বাক্ষর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা প্রকাশ্যে উপেক্ষা করে ইসলামী ব্যাংক বড়গোলা শাখা বগুড়ার ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের চক্রান্তের তথ্য উঠে এসেছে। এই ঘটনায় ইসলামী ব্যাংক পিএলসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আফাকু কোল্ড স্টোরেজের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়া সম্বনিত জেলা কার্যালয়কে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক ইউনিয়নে অবস্থিত আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডকে কেন্দ্র করে এই ঘটনায় জেলা ও দায়রা জজ আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক বগুড়া জেলা সমন্বিত কার্যালয়কে অতি দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকার ঋণ জালিয়াতি ও পুনঃতফসিলের অপচেষ্টা সংক্রান্ত অভিযোগে গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে মিল্লাত হোসেন নামের এক ব্যক্তি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার নথিপত্র ও প্রাথমিক তথ্য পর্যালোচনা করে আদালত বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের বগুড়া কার্যালয়কে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এরআগে ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট আফাকু কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুলাই গণহত্যার ৯ মামলার আসামি এবিএম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরী এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক তার স্ত্রী ইসমত আরা লাইজু যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর ব্যাংকে জমা দেওয়া বোর্ড রেজুলেশনে তাদের বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক এলাকায় অবস্থিত আফাকু কোল্ড স্টোরেজের অফিসে উপস্থিত থেকে সভায় অংশগ্রহণ ও স্বাক্ষরের তথ্য দেখানো হয়। এসব নথি যাচাই করে পুলিশের বিশেষ শাখার অনুসন্ধানে স্বাক্ষর জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
এদিকে ইসলামী ব্যাংক পিএলসি বড়গোলা শাখা ২০১০ সালে আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডকে ২২ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে। যা সুদ ও মুনাফাসহ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
এছাড়াও জালিয়াতির অভিযোগ উঠলেও নীতি সহায়তা সুবিধা পাবে না এবং সর্বনিম্ন ৫০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হলেই এ ঋণ পুনঃতফসিল বিবেচনা করে নীতি সহায়তা কমিটি। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা অনুসরণ না করেই সংশ্লিষ্ট মহলের বিরুদ্ধে পুনঃতফসিলের উদ্যোগ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এই মামলার আসামিরা হলেন-ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (প্রধান কার্যালয়)-এর চেয়ারম্যান ড. এম জুবায়দুর রহমান, ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুক খান, সিআইডি-২-এর ইনচার্জ মাহমুদ হোসেন খান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহাম্মদ সৈয়দ উল্লাহ, বগুড়ার জোনাল ইনচার্জ সিকদার শাহাবুদ্দিন, বিআরপিডি-এর পরিচালক বায়োজিত সরকার, আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান।
ইসলামী ব্যাংক জোনাল হেড সিকদার শাহাবুদ্দিন জানান, ‘মামলার বিষয়ে এখনো অবহিত নই। দুর্নীতি দমন কমিশন বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপসহকারি পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, আদালতের আদেশের কপি পেয়েছি। সেটি ঢাকায় প্রেরন করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে জেলা কার্যালয় অনুমতি পেলে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।