Saturday 20 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনসচেতনতা কর্মসূচিকে উপেক্ষা, এইডস’র কবলে হাজারো মানুষ

উজ্জল জিসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:০৮

এইডস আক্রান্ত রোগী। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: এইচআইভি-এইডস মারাত্মক এক সংক্রামক ব্যাধি। এই রোগ হলে মৃত্যু অনিবার্য। গত ২৫ বছরে সারাদেশে এইডস নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রোগটি প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে নেওয়া হয়েছে নানারকম পদক্ষেপও। কিন্তু এইডস দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর পরও মারাত্মক এই রোগটি নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের তেমন কোনো মাথা ব্যাথা নাই। তাই সংক্রামক এই ব্যাধিটি ধীরে ধীরে হাজার হাজার নারী-পুরুষকে গ্রাস করেছ।

জনস্বাস্থ্য ও এইডস নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এইডস নিয়ন্ত্রণে জনজীবনে প্রভাব বহুমুখী ও উল্লেখযোগ্য। উন্নত চিকিৎসা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধমূলক কর্মসূচির অভাবে এইডস বর্তমানে একটি মারাত্মক রোগ থেকে দীর্ঘমেয়াদী ও নিয়ন্ত্রণহীন সংক্রামক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, এইডস বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ হওয়ার পরও এর সঠিক চিকিৎসা আক্রান্ত রোগীদের হাতের নাগালে পৌঁছাতে সময় লাগছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে পারলে এইডস নিয়ন্ত্রণে রেখে সাধারণ জীবন-যাপন সম্ভব বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এইডস নিয়ন্ত্রণে প্রধান প্রভাবগুলো

দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবন: অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (ART) আবিষ্কারের ফলে এইচআইভি (HIV) আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দীর্ঘ ও প্রায় স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে সক্ষম হচ্ছেন।

সুবিধাবাদী সংক্রমণ হ্রাস: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হওয়ার ফলে মারাত্মক সুবিধাবাদী সংক্রমণ (Opportunistic Infections) হওয়ার ঝুঁকি কমেছে।

মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: নিয়মিত চিকিৎসা, শারীরিক কার্যকলাপ এবং মানসিক সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষন্নতা কমেছে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

কলঙ্ক ও বৈষম্য মোকাবিলা: বিভিন্ন নীতি ও আইনের মাধ্যমে এইচআইভি/এইডস সম্পর্কিত সামাজিক কলঙ্ক ও বৈষম্য দূর করার চেষ্টা চলছে। তবে এখনো এই সমস্যাটি একটি বড় বাধা হিসেবে বিদ্যমান। আক্রান্ত ব্যক্তিরা লোকলজ্জা বা সামাজিক বঞ্চনার ভয়ে চিকিৎসা বা পরীক্ষা করাতে চান না।

কর্মক্ষম জনসংখ্যার সুরক্ষা: এইচআইভি-এইডস সাধারণত সমাজের সবচেয়ে কর্মক্ষম বয়সের (২৫-৪৯ বছর) মানুষকে বেশি প্রভাবিত করে। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এই গুরুত্বপূর্ণ জনশক্তির স্বাস্থ্য ও জীবনকাল রক্ষা করতে সাহায্য করে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

সচেতনতা বৃদ্ধি: ব্যাপক প্রচার ও জনসচেতনতা কার্যক্রমের ফলে এইচআইভি ছড়ানোর পদ্ধতি এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বাড়ে, যা নতুন সংক্রমণ কমাতে সহায়ক।

গোপনীয়তা রক্ষা: এইচআইভি স্ট্যাটাস প্রকাশ ও রোগীর ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় বিভিন্ন নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে, যা আক্রান্তদের অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।

চ্যালেঞ্জ ও উদ্বেগ

গ্রামীণ এলাকায় সীমিত প্রবেশাধিকার: গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং এইডস নিয়ন্ত্রণের সুবিধা এখনও অনেক সীমিত।

ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী: শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মধ্যে সংক্রমণ বেশি এবং তাদের কাছে পৌঁছানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

অসচেতনতা: কিছু অসচেতনতা এবং ভুল ধারণা এখনো সমাজে বিদ্যমান, বিশেষ করে অশিক্ষিত ও গ্রামীণ নারীদের মধ্যে।

মানসিক স্বাস্থ্য: দীর্ঘমেয়াদী রোগ হিসেবে এইচআইভি আক্রান্তদের মধ্যে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এখনও গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এইডস নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ফলে আক্রান্তদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর রোগের সামগ্রিক নেতিবাচক প্রভাব কমে এসেছে। তবে, সামাজিক কলঙ্ক দূর করা, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো এবং চিকিৎসার পাশাপাশি সামাজিক ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করা এখনো এইডস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এইডস যেভাবে ছড়িয়েছে, তা রীতিমত উদ্বেগের বিষয়। এটি গুপ্ত ঘাতকের মতো ছড়াচ্ছে। মারাও গেছে বহু আক্রান্ত রোগী। সচেতনতার অভাবে এটি বেশি বেশি ছড়িয়েছে। কেউ ভ্রুক্ষেপ করছে না। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তেমন প্রচার-প্রচারণা নেই। ফলে এটি নীরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন সময় এসেছে এটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি প্রতিরোধে ব্যাপক ক্যাম্পেইন করতে হবে।’ পাশাপাাশ স্বাস্থ্য অধিদফতরকেও বেশি বেশি কাজ করতে হবে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম
বিজ্ঞাপন

যমুনা গ্রুপে চাকরির সুযোগ
২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০০:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর