ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বাজেট ব্যয় নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বৈঠকে নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি: ১২ মাসের গড় হিসেবে দেশের সার্বিকমূল্যস্ফীতি বিগত জুন ২০২৩ এর পর সর্বপ্রথম নভেম্বর২০২৫ মাসে ৯ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মার্চ ২০২৩ এ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ পেরিয়ে ৯.৩৩ শতাংশ হয়। তবে সার্বিকমূল্যস্ফীতি (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) ইতোমধ্যে বিগত জুন২০২৫ মাসে ৯ শতাংশের নীচে চলে আসে এবং নভেম্বর২০২৫ মাসে এটি আরোও কমে ৮.২৯ শতাংশ হয়।আশা করা যায়, সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিএবং কৃচ্ছসাধনের ফলে জুন’ ২০২৬ এ মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।
মজুরি প্রবৃদ্ধি: বিগত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরীপ্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে পার্থক্য ছিল অনেক বেশি যারফলে দেশের মানুষের প্রকৃত আয় কমে আসছিল। তবেচলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতিও মজুরী প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে পার্থক্য অনেকটাই কমেএসেছে। সর্বশেষ নভেম্বর ২০২৫ মাসে মূল্যস্ফীতি ও মজুরী প্রবৃদ্ধি (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) যথাক্রমে ৮.২৯ ও ৮.০৪ শতাংশে দাড়িয়েছে যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড়েছিল ৯.০২ ও ৭.০৪ শতাংশ। ফলে বিগত বছরগুলোতেউচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে প্রকৃত আয়ের পরিমাণ অনেককমলেও বর্তমান অর্থবছরে এ অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়েউত্তরণ সাধিত হবে।
কৃষি উৎপাদন: কৃষি খাতে যথাযথ প্রনোদনা ও ব্যবস্থাপনার ফলে বিগত অর্থবছরে বোরো মৌসুমেবোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে এবং বর্তমান সময়পর্যন্ত কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটায় আমন ধানেরওভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে চলতিঅর্থবছরে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাঅর্জিত হবে মর্মে আশা করা যায়। উল্লেখ্য,১৫.১২.২০২৫ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত আমন ধানের উৎপাদন১৬০.৯৫ লক্ষ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে। অবশিষ্ট ফসলকর্তন সম্পন্ন হলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবেবলে আশা করা যায়। পাশাপাশি, আউশ ধানেরউৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম হলেও২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় মোট উৎপাদন ৭.২০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন চলকের ভারসাম্যহীনতা ইতোমধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে চলে এসেছে।
আর্থিক ও বৈদেশিক খাত: গত ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণদাঁড়িয়েছে ৩২.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা আগস্ট ২০২৪ মাসে ছিল মাত্র ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরকাছাকাছি। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়ে আসা, প্রবাস আয়ের গতি বৃদ্ধি এবং দেশের আর্থিক খাতেসম্প্রতি সুদের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায়বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগামীতে ক্রমান্বয়ে আরো বৃদ্ধি পাবে।
চলতি হিসাব: বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্তধারাবাহিকভাবে চলতি হিসাব ঋণাত্নক ছিল এবং২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এরপরিমাণ ছিল যথাক্রমে -১৮.৭, -১১.৬, ও -৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে আর্থিক খাতেসুব্যবস্থাপনা ও অর্থ পাচার রোধের ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে এটি হয়েছে মাত্র -১৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরসময়ে এটি হয়েছে -৭৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রবাস আয়: উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৫ লক্ষ কর্মীর বৈদেশিক নিয়োগ নিশ্চিতহয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ লক্ষ ৯৭ হাজার এবং একই সময়ে ১৩.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রবাস আয় হয়েছে যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭.১৪ শতাংশ বেশী।
আমদানি: দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরোও উৎপাদনশীল করতে আমদানির ক্ষেত্রে আরোপিতবিধিনিষেধ অপসারন করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর-এ আমদানি প্রবৃদ্ধির হারছিল -১.২ শতাংশ (ঋণাত্মক) যা বর্তমান অর্থবছরের(২০২৫-২৬) একই সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬.১ শতাংশ।
ঋণপত্র: মুলধনী যন্ত্রপাতির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর ২০২৪ সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল -৩২.৮ শতাংশ (ঋণাত্মক) যা বর্তমান অর্থবছরের একই সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৭.৭ শতাংশ। এছাড়া, শিল্পজাত কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর ২০২৪ সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.১ শতাংশ যা চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪০.৯৮ শতাংশে। আর্থিক অব্যবস্থাপনার ফলে দেশের ইমেজএর নিম্নগতি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে যার উদাহরণ ঋণপত্র খোলার হার এবং ট্রেড ফিনান্সিং সহজতর হওয়া।