রংপুর: উচ্চশিক্ষার সুযোগসহ ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউশনের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ করলে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ আধা ঘণ্টার জন্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরে আলটিমেটাম দিয়ে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, তারা জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর রাজধানীর খামারবাড়িতে আন্দোলন করে সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করলেও নয় মাস পার হয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সুস্মিতা বলেন, ‘আমাদের জন্য স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে এটা বিলাসিতা নয়, এটা আমাদের অধিকার। কারণ আমরা যেসব শিক্ষার্থী কৃষি ডিপ্লোমা পড়ি, তাদের ২/১ জন বাদে সবাই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। আমাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের।’
পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মাঈশা আখতার মুক্তি বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক আট দফা মেনে নেওয়ার জন্য সরকার আমাদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু নয় মাসেও তা পূরণ করা হয়নি। আমরা মনে করি পরিকল্পিতভাবে আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। সেকারণে আমরা ক্লাস পরীক্ষা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। দাবি মেনে নিয়ে আমাদের ক্লাস পরীক্ষায় বসার এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হোক।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছামিউল ইসলাম বলেন, ‘একনাগারে ১৭ দিনের আন্দোলন শেষে গত ২১ এপ্রিল কৃষি উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের আশ্বাস পেয়ে আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তারা আমাদের দাবি মানতে টালবাহানা করছে। সেকারণেই আমরা পড়ার টেবিল, পরীক্ষার টেবিল ছেড়েছি। আজ মহাসড়ক ব্লকেড করলাম। প্রতিদিনই এর মাত্রা বাড়বে। প্রয়োজনে আমরা সচিবালয় ব্লকেড কর্মসূচিতে যাব।’
মোসাদ্দেক হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, তাহলে এ দেশে কৃষিশিক্ষা এত অবহেলিত কেন? উচ্চশিক্ষা কেন আমরা পাব না? আমরা চাই স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা ক্লাস পরীক্ষা ছেড়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ থেকে উঠব না।’
শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে গেজেট প্রকাশ ও নিয়মিত নিয়োগ নিশ্চিত, কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক সংকট দূরীকরণ, কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) অধীন থেকে বের করে সম্পূর্ণভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আলাদা প্রতিষ্ঠান, সব কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের অগ্রাধিকার, বেসরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের জন্য ন্যূনতম দশম গ্রেডের বেতন কাঠামো, মাঠ সংযুক্তি ভাতা প্রদান এবং চাকরিতে প্রবেশের পর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের জন্য ছয় মাসের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং নিশ্চিত করা।