ঢাকা: দেশে মূলধারার বিভিন্ন যানবাহনের পাশাপাশি ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলার রিকশা শহর, গ্রাম এবং রাজধানীতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যার নেই কোণ রেজিস্ট্রেশন বা লাইসেন্স ৷ অথচ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে চলাচল করছে এসব যান। ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। কিন্তু এসব থ্রি হুইলার নিয়ন্ত্রণে অনেক আওয়াজ দিচ্ছে। কাজ হচ্ছে না। মূলত দ্রুত এবং তুলনামূলক কম খরচে যাতায়াতের কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ট্রেসলার খ্যাত থ্রি হুইলার। এতে মানুষের পরিবহন ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে। অর্থনীতির গতি বাড়ছে। আর এতে বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবিকার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে থ্রি হুইলার বন্ধের পর্যায়ে নেই। সুতরাং নীতিমালার মাধ্যমে লাইসেন্স দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার সময় আবির্ভাব হয়েছে।
সোমবার(২২ ডিসেম্বর) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) স্টাডি অন’ ইন্টিগ্রেটিং ইলেকট্রনিক থ্রি হুইলার ইন্টু ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়েফরওয়ার্ড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, থ্রি হুইলারে লিড এসিডের ব্যাটারি ব্যবহার হচ্ছে। এসবের ব্যবহারে পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পশুপাখির বাস্তুসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কিন্তু এর সমতা ব্যবহার এবং জনপ্রিয়তার দিক বিবেচনা করে শুরু পরিবেশের মধ্যে বিবেচনাকে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নেই। মানুষের নিরাপত্তা, সুবিধা, জীবিকা, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে লিড ব্যাটারির পরিবর্তে কম ক্ষতিকর লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারা ব্যবহার করে নীতিমালার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক পরিবহনে অন্তর্ভুক্ত কর সময়ে দাবি।
তিনি মূল আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগে জানান যে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ও ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সংবাদপত্র, সংস্কৃতি এবং মুক্তবুদ্ধির প্রতিষ্ঠানের এপর মবতন্ত্র দিয়ে আঘাত খাটো করে দেখার বিষয় নয়। যা আগামী নির্বাচনের পরে বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। সে জন্য এসব প্রতিষ্ঠানকে নিজে কৌশল অবলম্বন করে সামনে আগাতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডির প্রোগ্রাম সহযোগী মো. খালিদ মাহমুদ বলেন, দেশে লাখ লাখ যানবাহন চলছে। কিন্তু নিবন্ধ আছে মাত্র সাড়ে ২২ হাজার। এর বাইরে থ্রি হুইলার রিকশা ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে। সেবা নিচ্ছেন ১১২ কোটি মানুষ। এত বড় সংখ্যক যানের নিবন্ধন নেই। যারা চালান, তাদের নেই কোন প্রশিক্ষণ। এতে দক্ষতা বাড়ছে না। তাহলে মুখের কথায় চলে এসব যান। যা অর্থনীতিতে গৃরৃত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যদি প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়র করা যায়। তখন একটা আয় পাবে সরকার। আবার নীতিমালার কারণে ক্ষতি কমবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের আয় বাড়বে। যার বিশাল ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।
তিনি বলেন, নীতিমাললার মাধ্যমে থ্রি হুইলারকে গণপরিবহন হিসাবে বিবেচনায় আনতে হবে। একটা সিস্টেম দাঁড় করাতে হবে। স্ট্রাকচারের মধ্যে আনতে হবে। ডদিও ইলেকট্রনিক যান হওয়ায় পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। কিভাবে কার অনুমোদন নিয়ে চলবে তা নির্ধারণ করে ক্ষতি কমাতে হবে। আইনের আওতায় আনা জরুরি। কেউ আইন লঙ্ঘণ করলে তার শাস্তি দিতে হবে ৷ তখন এলোমেলো চলাচল নিয়ন্ত্রণ হবে। দুর্ঘটনা কমবে। মানুষ বেশি সেবা পাবেন।
তিনি বলেন, এ ধরণের যানের প্রায় ৪০ লাখ চালক ও তাদের পরিবারসহ ৩ কোটির বেশি জনগোষ্ঠীর সুবিধাভোগী। তাদের রোড নেটওয়ার্ক, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক সেফটি, এয়ার কোয়ালিটির ব্যবস্থাপনার সুনির্দিষ্ট কাঠামো ও নীতিমালান মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ-উজ-জামান খান বলেন, অনেক ট্রেডিশনাল রিকশা কনভার্ট করে ব্যাটারিচালিত করা হয়েছে। এসব যানের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কারণ কম খরচে দ্রুত চলাফেরা করা যায়। এটার সুবিদা বিবেচনায় বন্ধ করার পর্যায়ে নেই। দুর্ঘটনা কমার লক্ষ্যে এটার গতি ৩৫-৪৫ কিমি থেকে কমিয়ে ঘন্টায় ২৫ কিমির মধ্যে আনতে হবে। এটার যে চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে, তা আর বন্ধ না করে লাইসেন্স এবং চালকের প্রমিক্ষনের ব্যবস্থা করে মূল পরিবহনের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। পাশাপাশি উৎপাদন কারী, , ধারণ ক্ষমতা এবং সড়কের সঙ্গে সামঞ্জ্যস্য রেখে ইউনিক পরিবহন চালু করতে হবে। আর লিড ব্যাটারীর পরিবর্তে ইথিয়াম আয়নের ব্যাটারী সংযোজন করতে হবে। এতে পরিবেশের ক্ষতি কমবে।
রিকশা, ব্যাটারি রিকশাভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন বলেন, দেশে ২০১০ সালে ব্যাটারি রিকশা চায়না থেকে প্রথম আমদানি করা হয়। আর ২০১২ সাল থেকে সার্ভিস রোড, লাইসেন্সের দাবি করে আসছিলাম। কিন্তু সরকার নজর দেয় ২০২৭ সালে। এরপর কখনেবন্ধ এবং কখনেচারু করার নামে সরকার খেলে। আদালত পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। পরে আপিল বিভাগ রায় দেয় রিকশা চারুর পক্ষে। এখন রায় রয়েছেম কিন্তু নিতিমালা নেই। আর ১১১টি সড়ক দুর্ঘটনার কারণের মধ্য ব্যাটারি চালিত রিকশার অবস্থান একেবারে সামান্য। আর এখনকার ব্যাটারি চালিত রিকশায় লাইট, হাউড্রোলিক ব্রেক, ইন্ডিকেটর লাইট (সিগনাল লাইট) সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এখন দরকার এসব যানকে নীতিমালার আওতায় নেওয়া।