Tuesday 23 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তারেক রহমানের সংবর্ধনায় কত মানুষ হতে পারে?

মো. মহসিন হোসেন স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:৪৩ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:৫৯

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) স্বদেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বইছে উৎসবের আমেজ। বলা যায় তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন রূপ নিয়েছে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে।

রাজধানীর ৩০০ ফিট সড়কে আয়োজিত এই গণসংবর্ধনায় কত মানুষের সমাগম হবে; তা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। দলীয় নেতাকর্মীদের দাবি ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী, এটি হতে যাচ্ছে দেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম জনসমাবেশ। শুধু দলীয় শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং তারেক রহমানের এই আগমনকে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এক নতুন মোড় হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ জনতা।

বিজ্ঞাপন

তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে সরাসরি যাবেন রাজধানীর ৩০০ ফিট সড়কের সংবর্ধনা মঞ্চে। সেখানে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেবেন তিনি। তারপর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন।

আরও পড়ুন-১৯ আসনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী, সংখ্যা বাড়তে পারে!

দীর্ঘ ১৭ বছরেরও বেশি সময় পরে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। তাকে উঞ্চ অভ্যর্থনা জানাবে তার দল বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তার সঙ্গে যোগ হবে দেশের সাধারণ জনগণ। তারেক রহমানের দেশে আগমনে সংবর্ধনায় ঢাকাবাসীর পাশাপাশি ঢাকার বাইরে থেকে আগত জনগণ ও দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা থাকবে।

দলীয় নেতারা বলছেন, কত মানুষ হাজির হবে তা তো নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে এটা যে স্মরণকালের সর্ববৃহত সমাবেশ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন ঘিরে শুধু বিমানবন্দর আর ৩০০ ফিট নয় বরং পুরো ঢাকা শহরে মানুষের সমাগম হবে। অনেকে হয়তো সংবর্ধনা মঞ্চের কাছেও যেতে পারবেন না।

জানতে চাইলে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘কত মানুষ হবে তা অনুমান করা কঠিন। তবে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকায় যে সমাবেশ হবে তা দেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই সমাবেশে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আসবে। আসবে মা-বোনেরা।’

আরও পড়ুন-মিত্র কমছে বিএনপির!

আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আশা করি নিরাপত্তায় কোনো সমস্যা হবে না। সরকারের নিরাপত্তার সঙ্গে দলীয় নিরাপত্তাকর্মীরাও কাজ করবেন। এ ছাড়া চেয়ারপারসনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত দলীয় সিএসএফ থাকবে। আশা করি নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটবে না।’

সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা উপলক্ষ্যে তাদের মধ্যেও একটা উত্তেজনা রয়েছে। সবাই এটা নিয়ে আলোচনা করছেন। যারা বিএনপি সমর্থক তারা বলছেন, তারেক রহমান দেশে ফিরলে দেশের রাজনীতির চিত্র পাল্টে যাবে। এটা বিএনপির সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। ঘরে অভিভাবক থাকলে যেভাবে ঘর মজবুত থাকে। তারেক রহমান দেশে ফিরলে বিএনপিও মজবুত হবে।

রাজনৈতিক সচেতন সাধারণ মানুষ মনে করেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা রাজনীতির মাঠের জন্য ইতিবাচক। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশে নেতৃত্ব শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই শূন্যতা অনেকটা পূরণ হবে। তারেক রহমানের আগমনে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবীত হবে।

আরও পড়ুন-বিএনপির ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনায়’ দুর্নীতি হটানোর টার্গেট

বিএনপি সমর্থক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি নাম যার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। তারেক রহমান আসছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ অপেক্ষায় আছেন। অত্যাচার নিপীড়ন, মামলা, গ্রেফতার সব সহ্য করেছে। শুধু একটি দিনের আশায়। সেই দিনটি আসছে। যেদিন দেশের মাটিতে পা রাখবেন গণতন্ত্রের সৈনিক তারেক রহমান। তারেক রহমান শুধু একজন নেতা নন। তিনি একটি আন্দোলন। তিনি একটি বিশ্বাস, তিনিই স্বপ্ন। তার আগমনে ঢাকায় কত মানুষ আসবে তা কেউ হিসেব করে বলতে পারবে না। তবে শুধু দেখতে পারবে কত মানুষ এসেছে।’

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মীসহ অনেক সাধারণ মানুষ ঢাকায় আসবেন। ফলে লাখ লাখ লোকের সমাগম হবে। কত মানুষ হবে তা অনুমান করে বলা যাচ্ছে না।’

পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী রুহুল আমীন দুলাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তিন হাজারের মতো দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকার ৩০০ ফিটে দলীয় চেয়ারম্যানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেব।’

কত মানুষ জড়ো হতে পারে এ নিয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা সিটি ও আশেপাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ, মন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী থেকে কয়েক লাখ লোক আসবেন। এ ছাড়া বগুড়া থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর আসার কথা রয়েছে। একইসঙ্গে দেশের প্রতিটি উপজেলা থেকে দুই থেকে তিন হাজার নেতাকর্মীর আসার সম্ভাবনা আছে। তাতে ঢাকার বাইরে থেকে ১০/১৫ লাখের বেশি মানুষ আসতে পারেন। সব মিলিয়ে ২০/২৫ লাখ লোকের সমাগম হবে এটা অনুমান করা যায়।

আরও পড়ুন-বিএনপির শরিক তিন নেতা মনোনয়নবঞ্চিত, চাপা ক্ষোভ

এদিকে ৩০০ ফিট সড়কের ওপর তারেক রহমানের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সংবর্ধনা মঞ্চ। ইতোমধ্যে সেখানে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। তারা কড়া নজরদারিতে রেখেছেন পুরো এলাকা। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা বাহিনীর লোকেরাও নিরাপত্তার বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছেন। মঞ্চ প্রস্তুতির তদারকিতে আছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতাকর্মীসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারা।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক-সরকারের আমলে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনে পাড়ি জমান। সেই থেকে তিনি পরিবার নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৯ ফেরুয়ারি থেকে লন্ডনে বসেই বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

আগামী ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে তার সঙ্গে আসবেন তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।

বিজ্ঞাপন

আরো

মো. মহসিন হোসেন - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর