ঢাকা: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মূলত বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ’ বিভিন্ন অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ করেছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তি ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন। পরে কয়েকজনকে আটকও করে পুলিশ।
জানা যায়, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে মঙ্গলবার ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চের ডাকে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে আগেই ডেপুটি হাইকমিশন চত্বর কড়া নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয়েছিল। তবে সে সতর্কতাও শেষ পর্যন্ত অশান্তি ঠেকাতে পারেনি।
এদিন দুপুরে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কর্মীরা ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল পুলিশ প্রশাসন। একাধিক স্তরে লোহার ব্যারিকেড বসানো হয়। তবুও বিক্ষোভকারীরা তৃতীয় ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক ধস্তাধস্তি শুরু হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হন, কেউ কেউ রক্তাক্তও হন। প্রাথমিকভাবে আহতদের স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেইসঙ্গে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় আটক ব্যক্তিদের বহনকারী প্রিজন ভ্যানের সামনে শুয়ে পড়ে কিছু বিক্ষোভকারী প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
এদিন শুধু হিন্দুত্ববাদী সংগঠনই নয়, সিপিআইএমসহ বিভিন্ন বামপন্থী দলের আহ্বানেও ডেপুটি হাইকমিশনের উদ্দেশে পৃথক কেন্দ্রীয় মিছিল বের করা হয়। এছাড়া বিকেলেও বিভিন্ন গণসংগঠন ও ব্যক্তির উদ্যোগে মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
এর আগে গত ২০ ডিসেম্বরও কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল বাংলাপক্ষ নামের একটি সংগঠন। সেদিন কলকাতার বেগ বাগান ও পার্ক সার্কাস সাত রাস্তার মোড়ে সংগঠনটির শতাধিক নেতাকর্মী জমায়েত হয়ে বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের দিকে এগোতে গেলে তাদের আটকে দেয় পুলিশ।
চলমান এই পরিস্থিতির মধ্যেই কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস চত্বরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। তার ওপর গত শনিবারের বাংলা পক্ষের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বেশ কিছুটা দূর থেকেই ব্যারিকেড দেয়া হয়। সেখানে সংগঠনটির মিছিল আটকে দিলে পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে সংগঠনটির সদস্যরা। পরে দীর্ঘক্ষণ সেখানেই অবস্থান করেন তারা।
সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহিদ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাও ভারতে পালিয়ে গেছে বলে দাবি করছেন অনেকে। এসব কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। দুই দেশেই একে অপরের কূটনৈতিক স্থাপনার সামনে বিক্ষোভ-অবস্থান তাই এখন নিয়মিত দৃশ্য।