সাতক্ষীরা: শীতের সকাল। বাড়িতে ঘটাঘট শব্দ। কেউ মাসকলাই পিষছে কেউ আবার চালকুমড়া। কার্যক্রম চলছে ভোর থেকে। সকাল ৭টা। ভোরের সূর্য উঁকি দিচ্ছে জানালা দিয়ে। বাহিরে চোখ যেতেই দেখা মিলল গল্পে গল্পে নারীদের কুমড়া বড়ি দেওয়ার ব্যস্ততা। কেউ বড়ি দিচ্ছেন আবার কেউ গোল করে সেগুলোকে সারিবদ্ধ করে রাখছেন। এমনই ব্যস্ততা দেখা গেছে কলাগাছি গ্রামের নারীদের। শুধু কলাগাছি নয় শীতের মৌসুমে সব জেলায় সব গ্রামে এমন ব্যস্ততা দেখা যায় হরহামেশাই।
কিভাবে তৈরি হয় কুমড়া বড়ি
কুমড়ার বড়ি তৈরি করা হয় মাসকলাইয়ের ডাল আর চালকুমড়া দিয়ে। মাসকলাই বলতে গ্রামের মানুষজন সেটাকে ভেড়ির বাড়ের ডাল বলে। মানে ঘেরের ভেড়ির উপরে এই ডাল লাগিয়ে থাকে। তবে এর সঙ্গে সামান্য মসলাও থাকে। বাজার থেকে ডাল সংগ্রহ করে রাতে ভিজিয়ে রাখা হয়। ভেজানো ডাল হাতে ভেঙে তাতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয় রাতে, তারপর ভোরে উঠে বাটা চালকুমড়া ও মসলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় বড়ির খামির। এরপর টিনের চালে বা কাপড়ে গুটি গুটি করে বড়ি দেওয়া হয়। নরম অবস্থায় এগুলো পাতলা কাপড় বা মাচায় সারি করে রোদে শুকানো হয়।
কোন কোন মাসে কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়
বর্ষাকাল বাদে বাকি মাসগুলোতে কমবেশি কুমড়ার বড়ি তৈরি করা হয়। বছরের ৬ মাস কুমড়ার বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। শীতকাল কুমড়ার বড়ি তৈরির ভরা মৌসুম। এসময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কম-বেশি কুমড়ার বড়ি তৈরি করা হয়। এ ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবেও গুরুত্ব পাচ্ছে এই কুমড়ার বড়ি।
কুমড়া বড়ি বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে
মনিকা রায় বলেন, বাজারের সাদা বড়ির বেশিরভাগই ভাল হয় না। বিক্রেতারা কুমড়ার পরিবর্তে পেঁপে আর আটা মিশিয়ে থাকে। এজন্য আমরা প্রতিবছর ডাল আর কুমড়া কিনে বাড়িতে বড়ি তৈরি করি। এ বছর আমরা কুমড়া কিনেছি পাঁচটা ৩০০ টাকায় আর কলাইয়ের ডাল কিনেছি ৬০০ টাকার। এতে কয়েক কেজি কুমড়া বড়ি হবে, যা পুরো শীতকাল খেতে পারব। তাছাড়া আত্মীয়-স্বজনদেরও দিতে হয়। বাড়িতে বানানো বড়ি বাজারেরগুলোর চাইতে অধিক স্বাদের হয়।
অনলাইনে ফেসবুক এবং ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করেন অপূর্ব। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ পরিবেশে এই কুমড়া বড়ি তৈরিতে সাড়ে ৫০০ টাকার উপরে খরচ পড়ে যায়। ফলে এসব বড়ি ৬০০-৭০০ টাকা কেজি হিসেবে অনলাইনে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। তাহলে আমাদের কিছু টাকা থাকে। এই কাজে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ৪-৫ জন নারী ব্যস্ত থাকেন।’
স্বাদে কেমন কুমড়া বড়ি
শীতের আমেজ, নানা রকম ঐতিহ্যবাহী খাবারের পসরা সাজানো থাকে টেবিলে। তার মধ্যে একটি হলো কুমড়ার বড়ি, যা খুবই মুখরোচক একটি খাবার। কুমড়ার বড়ি তৈরির উপযুক্ত সময় শীতকাল। শীতের আগমনে সাতক্ষীরায় শুরু হয়েছে কুমড়ার বড়ি তৈরির ধুম। তরকারির স্বাদকে ভিন্ন মাত্রায় নিতে কুমড়ার বড়ি অতুলনীয়। দিনভর কুমড়া বড়ি দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারীরা।
সাতক্ষীরা খামার বাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শীতে কুমড়ার বড়ি খুবই জনপ্রিয়। ঘরোয়া পরিবেশে কুমড়ার বড়ি তৈরি হয়। স্থানীয় নারীদের হাতে তৈরি এ বড়ি সুস্বাদু। গ্রামের নারীরা খুব পরিশ্রম করে ভালো মানের বড়ি তৈরি করেন। বাজারে অনেক বড়ি পাওয়া যায় কিন্তু তাদের বড়ির স্বাদ আলাদা। সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত হওয়ায় চাহিদাও বেশি।’