চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রতিষ্ঠার পর চট্টগ্রামে বিএনপির শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তোলা নেতাদের মধ্যে অন্যতম আবদুল্লাহ আল নোমান। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। আসছে সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বিএনপির নির্বাচনের মাঠে অনুপস্থিত থাকছেন নোমান। চট্টগ্রামে নোমানের অনুসারী বিপুল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল, ছেলে সাঈদ আল নোমানকে মনোনয়ন দিয়ে বিএনপি প্রয়াত এ নেতার অভাব পূরণ করবে। কিন্তু শুরুতে মনোনয়নের তালিকায় নোমানপুত্রের নাম না থাকায় স্বাভাবিকভাবে হতাশ হয়েছিলেন তারা।
তবে শেষপর্যন্ত নোমান পরিবারকে ‘মাইনাস’ করেনি বিএনপি। বাবার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ছেলে সাঈদ আল নোমান। শেষমুহুর্তে এই মনোনয়ন বিএনপির নির্বাচনী চমক হয়ে ধরা দিয়েছে সবার কাছে। উচ্ছ্বসিত নোমান অনুসারী হাজারো বিএনপি নেতাকর্মী। বিশেষত. ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার দুইদিনের মধ্যে আবদুল্লাহ আল নোমানের পরিবারকে এমন মূল্যায়ন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন সাঈদ আল নোমান।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাঈদ আল নোমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি একেবারে উচ্ছ্বসিতও নেই, আবার কিছুদিন ধরে যে হতাশা কাজ করছিল, এখন সেই হতাশাও নেই। আমার কাছে এ মনোনয়ন আমার কাঁধে একটা গুরুদায়িত্ব। প্রথমত হচ্ছে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার লড়াই, যদি জয়ী হতে পারি তারপর দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন অর্থাৎ পিপলকে সঠিক সার্ভিসটা দেওয়ার লড়াই। যদি ৯০ ভাগ মানুষকেও আমি আমার সার্ভিসটা ঠিকমতো দিতে পারি, তাহলে মনে করবো আমি সফল।’
‘তবে আমি গভীরভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ যে উনারা আমাকে মূল্যায়ন করেছেন। আমি মনে করি, এটি আমাদের পরিবারের নিষ্ঠা ও আদর্শিক রাজনীতির প্রতি দলের মূল্যায়ন। কোনো ব্যক্তিকে ন্যূনতম অবমূল্যায়নের ইচ্ছা আমার নেই। বড়দের শ্রদ্ধা, সম্মান দিয়ে আমি সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। সবসবময় পজেটিভ থাকতে চাই।’
আবদুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রামে ‘রাজনীতির বরপুত্র’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা ছিল। ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়ন এবং পরবর্তীতে ভাসানীপন্থী ন্যাপের বাম রাজনীতি করে আসা নোমান ১৯৮১ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে যোগ দিয়েছিলেন বিএনপিতে। সেই থেকে শুরু। আশি-নব্বইয়ের দশক এবং এর পরবর্তী আরও অন্তঃত এক দশক চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে আবদুল্লাহ আল নোমানকে ঘিরেই।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আবদুল্লাহ আল নোমানের জীবনাবসান ঘটে। আমৃত্যু তিনি বিএনপির সঙ্গেই ছিলেন। সর্বশেষ তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। নোমানের মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীরা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে টেনে আনেন সাঈদ আল নোমানকে। তিনি জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম-১০ আসনে নিয়মিত রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন তিনি। উচ্চশিক্ষিত সাঈদ আল নোমান চট্টগ্রামে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান।
আবদুল্লাহ আল নোমান ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বর্তমানে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দু’বারই মন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি ওই আসনের পরিবর্তে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ওই আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন।
তবে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের নামের প্রথম তালিকায় চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়। তিনি আগে দুই দফায় পাশের চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলের এ হেভিওয়েট নেতার আসন পরিবর্তনে হতাশা সৃষ্টি হয় নোমান অনুসারীদের মধ্যে।
তবে শেষপর্যন্ত আমীর খসরুকে চট্টগ্রাম-১১ আসনে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দিয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসন নোমান পরিবারের কাছেই রাখল বিএনপির হাইকমান্ড।
এদিকে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ও নগরীর একাংশ) আসনেও প্রার্থী পরিবর্তন করেছে বিএনপি। সেখানে বহুল আলোচিত সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আসলাম চৌধুরীকে শেষপর্যন্ত চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্রথম দফায় সেখানে যুবদল নেতা কাজী সালাহউদ্দিনকে প্রার্থী করা হয়েছিল।
চট্টগ্রামে মোট সংসদীয় আসন ১৬টি। এর মধ্যে ১৫টি আসনে বিএনপি তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনে দলটি এখনও তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি।
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাতের মধ্যেই ওই আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। চট্টগ্রামে মোট দুটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে।’