নীলফামারী: সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ইঞ্জিনিয়ার শাহরীন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বলেছেন, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি যেমন আমরা বিশ্বাস করি না, তেমনি ইসলামের নাম ব্যবহার করে রাজনীতি করুক সেটাও আমরা চাই না। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র আমাদের সবার এই নীতিতেই আমরা বিশ্বাস করি। যে আদর্শে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিশ্বাস করতেন, আমরাও সেই আদর্শেই আস্থা রাখি।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে নীলফামারী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় নীলফামারীর বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী ও জেলা বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ইঞ্জিনিয়ার তুহিন বলেন, ‘আমরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠে নীলফামারী জেলাকে অনেক ওপরে তুলতে চাই। আমরা আইডেন্টিটি পলিটিক্সে বিশ্বাস করি যেখানে জেলার উন্নয়নই হবে মূল পরিচয়। সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদের লেখনির মাধ্যমেই বিষয়গুলো মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। আপনারা ভালোভাবে লিখলে নীলফামারী জেলা আরও এগিয়ে যেতে পারে। আমরা রাজনীতিবিদ হিসেবে চেষ্টা করি, আপনারাও আপনাদের কলমের শক্তি দিয়ে জেলাকে সামনে এগিয়ে নিতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেলার মানুষের স্বার্থে কিছু বিষয়ে আমাদের ঐক্য থাকা খুবই জরুরি। আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবো। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঢাকায় এসে কোনো সমস্যায় পড়লে তাদের এলাকার লোকজন সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। কিন্তু আমাদের এলাকায় সেই সংস্কৃতি তুলনামূলকভাবে কম। আমি ব্যক্তিগতভাবে এলাকার মানুষের জন্য বিভিন্ন জায়গায় তদবির করি, এমনটা সবারই করা উচিত।’
এলাকার মানুষের পারস্পরিক সহায়তার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সিলেট, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের অনেক মানুষ বিদেশে, বিশেষ করে লন্ডনে গেছেন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা নিজেদের এলাকার মানুষদেরও সেখানে টেনে নিয়েছেন। কিন্তু আমাদের জেলা থেকে কয়জন এমনটা করেন? আমাদের এই মানসিকতা বাড়াতে হবে।’
ডিজিটাল উন্নয়ন প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার তুহিন বলেন, ‘আমরা এখনো প্রকৃত অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে আছি। আগের সরকার বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল’ নয়, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলেছে। কিন্তু বাস্তবে আমাদের জ্ঞান ও শিক্ষার ঘাটতি রয়েছে। চীন নিজেদের ব্যাপক উন্নয়নের পরও নিজেকে ‘ডিজিটাল চায়না’ বলে না। একটি দেশকে ডিজিটাল বলতে হলে শুধু রাস্তাঘাট হলেই হবে না, প্রয়োজন ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড। আজও আমরা ঘরে ঘরে ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড পৌঁছাতে পারিনি তাহলে দেশকে ডিজিটাল বলা যায় কীভাবে?’
তিনি বলেন, ‘আপনার ধর্ম আপনার, আমার ধর্ম আমার কিন্তু নীলফামারী জেলা আমাদের সবার, এই রাষ্ট্রও আমাদের সবার। বাংলাদেশকে উন্নত করতে হলে সাধারণ কিছু মৌলিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জিডিপি এখন অনেক বড়, প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এই অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে খুব দ্রুতই দেশ এগিয়ে যেতে পারবে।’
মতবিনিময় সভায় নীলফামারী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও নীলফামারী ০১ আসনের বিএনপি মনোনিত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এএইচএম সাইফুল্লাহ রুবেল বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি জুলাই-আগস্টের যে বাংলাদেশ সেই বাংলাদেশে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে নেতৃত্ব প্রয়োজন, সেই নেতৃত্বের ব্যাপারে আমরা সবাই একমত হব। নেগেটিভ বক্তব্য দিয়ে আমরা দলকে বিভ্রান্ত করতে চাই না কিংবা আমাদের অগ্রযাত্রার পথকে সংকুচিত করতে চাই না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। সবাই সহযোগিতা করলে আমরা একটি আধুনিক নীলফামারী গড়ে তুলতে পারব।’
এ সময় আরও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম, নীলফামারী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আল মাসুদ চৌধুরী, নীলফামারী প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতিয়ার রহমান বাড্ডা, সাধারণ সম্পাদক নুর আলম, সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আলম সিয়াম, তাহমিন হক ববি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান রাব্বি প্রধান সহ জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী ও বিএনপির নেতাকর্মীরা।অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার শাহরীন ইসলাম চৌধুরী তুহিনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান নীলফামারী প্রেসক্লাবের নেতারা।