Monday 29 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে খসরু বললেন— দেশ গণতন্ত্রের পথে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৫৮ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৫৯

নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে যে আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেই আসনে পুনর্বার ভোটের লড়াই করতে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তিনি বলেন, দেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের জন্য তিনি মনোনয়ন পত্র জমা দেন।

এসময় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করসহ নেতাকর্মীরা আমীর খসরুর সঙ্গে ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ‘দেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে’ মন্তব্য করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের জন্য অনেক একটা আনন্দের দিন। বিগত ১৫, ১৬, ১৭ বছর ধরে মানুষের ত্যাগ স্বীকার করেছে, তারা জীবন দিয়েছে, তারা গুম হয়েছে, খুন হয়েছে, মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে, চাকরি হারিয়েছে, ব্যবসা হারিয়েছে, নিঃস্ব হয়ে গেছে। বহু ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ আমাদের ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ করবে, নির্বাচিত সরকার করবে যে সরকার জনগণের কাছে, যে সংসদ জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।’

‘বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পেয়েছে, এটা আজ আনন্দের দিন। আমরা আজ গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছি, গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরে পাওয়ার দিকে যাচ্ছি। সুতরাং এই আনন্দ আজ সকলের, আমরা যারা আন্দোলন করেছি, যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে, যারা মৃত্যুবরণ করেছে, যারা পঙ্গু হয়ে গেছে। এই দিনটা সকলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। সুতরাং এটাকে সামনে রেখে আমরা গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছি। আল্লাহর কাছে আমরা চাইব, যেন আমরা সফল হতে পারি। বাংলাদেশ যাতে আবার পূর্ণ গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসে। বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পায়। এটার জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করা হয়েছে। এটাকে আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না।’

সবাইকে জনগণের ওপর আস্থা রেখে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর বাইরে অন্য কোনো পথ নেই। পথ একটাই, জনগণের উপর আস্থা রাখতে হবে, নাগরিকের ওপর আস্থা রাখতে হবে এবং তাদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে আগামীর বাংলাদেশে চলতে হবে। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র, এটা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলে দিতে হবে। অপরের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেও আমাদের তার মতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে, সম্মান জানাতে হবে। একটা সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের চালু করতে হবে।’

প্রত্যেক দলের নির্বাচনী কৌশলকে বিএনপি সম্মান করে জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘সকলের অধিকারকে আমরা স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের মানুষ দিন শেষে সিদ্ধান্ত নেবে। কাদের মাধ্যমে এদেশে গণতন্ত্র আগে ফিরে এসেছিল, বিগত দিনে একদলীয় শাসনের পরে, এরশাদের সময় এবং বিগত এক-এগারোর পরে দীর্ঘসময় আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কাদের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে তো অজানা নেই। আজ বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা হচ্ছে, গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া। সুতরাং কোন দলের মাধ্যমে বারবার গণতন্ত্র ফিরে এসেছে, কারা গণতন্ত্রের চর্চা ব্যাহত করেছে আর কারা গণতন্ত্রের জন্য সবকছু বিসর্জন দিতে রাজি আছে- বাংলাদেশের মানুষের কিছুই অজানা নেই।’

আগামীদিনের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে উন্নয়ন বলতে আমরা সঠিক উন্নয়ন করব, ওই বাটপারি-চুরির উন্নয়ন না। সঠিক উন্নয়ন, যেখানে প্রতিটি মানুষ উন্নয়নের সুফল পেতে পারে। উন্নয়নে যেন তারা অংশগ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ জানে এটা কারা করতে পারবে এবং আমি নিশ্চিত আগামী নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সেটা তারা আবারো প্রমাণ করবে। এই চট্টগ্রাম বন্দরে যত উন্নয়ন হয়েছে সব বিএনপির আমলে হয়েছে। এই বন্দর আগামীদিনে আরও উন্নত জায়গায় যাবে।’

‘আমরা তো বলেই দিয়েছি, আগামীদিনে বিএনপির স্বাস্থ্যের পরিকল্পনা কী, শিক্ষার পরিকল্পনা কী, কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা কী এবং বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা কী সেটা আমরা বলেছি। এমনকিছু করা হবে যেটা প্রত্যেকটি মানুষের জীবনকে টাচ করবে। এরকম একটা উন্নয়ন আমরা আগামীদিনে করতে চাই। কোনো পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি আমরা করতে চাই না। আমরা প্রত্যেকটি নাগরিকের পৃষ্ঠপোষকতা করতে চাই। একটি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বাংলাদেশ চলতে পারে না।’

এরপর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শেষমুহুর্তে এসে গতকাল (রোববার) চট্টগ্রাম-১১ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এবং আজ জমা দেন।

চট্টগ্রামের বনেদি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ও ব্যবসায়ী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ১৯৯১ সালে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে বেগম খালেদা জিয়া প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন। নির্বাচনের পর তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে জিতে আসেন আমীর খসরু। এরপর ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম এবং ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনেও তিনি ওই আসন থেকে বিজয়ী হন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করলে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী হন। তবে ২০০৮ সালে মনোনয়ন পেলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ লতিফের কাছে হেরে যান। ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন, তাকে পরাজিত দেখানো হয়।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে পর আওয়ামী লীগের টানা ১৭ বছরের শাসনামলে বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক, সভাপতি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে আসীন হন। বিএনপির টানা আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন, একাধিকবার কারাবরণও করেন। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আমীর খসরুর গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ মিলেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের বৈঠকে তার উপস্থিতির মধ্য দিয়ে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আমীর খসরু চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, খুলশী, হালিশহর) আসন থেকে প্রথমে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তিনি নিজেই ওই আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন, যদিও আসনটি বিএনপির আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমানে প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের আসন ছিল। দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা ছিল, নোমানের মৃত্যুর পর আমীর খসরু সেই আসন থেকে প্রার্থী হয়ে নিজের চট্টগ্রাম-১১ আসনে ছেলে ইসরাফিল খসরুকে প্রার্থী করতে আগ্রহী ছিলেন। তবে শেষপর্যন্ত বিএনপি খসরুকে তার নিজের আসনে পাঠিয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমানকে।

বিজ্ঞাপন

এনসিপিতে যোগ দিলেন আসিফ মাহমুদ
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৪৮

আরো

সম্পর্কিত খবর