Tuesday 30 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচন আয়োজনে চ্যালেঞ্জ ও হুমকি রয়েছে: হুমায়ুন কবির

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:০২ | আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:০৪

বক্তব্য দিচ্ছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। ছবি: সারাবাংলা

রংপুর: জুলাইয়ের আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা ছিল ন্যায়বিচার, ঐক্য, সংহতি এবং বৈষম্যহীনতা— এই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ভবিষ্যতের স্বপ্ন গড়তে সহিংসতা পরিহার করে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, সংঘাতমুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য সবাইকে দায়বদ্ধতা, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদকে সম্মান করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর নগরীর একটি বেসরকারি হোটেলের কনফারেন্স রুমে ‘বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তর’-শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন হুমায়ুন কবির।

বিজ্ঞাপন

বিইআইয়ের আয়োজনে এই সভায় আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং এনজিওকর্মীরা।

হুমায়ুন কবির তার বক্তব্যে বলেন, ‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ছিল ন্যায়বিচার, ঐক্য ও সংহতি এবং বৈষম্যহীনতা। এই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আমরা ভবিষ্যতের যে স্বপ্ন দেখি— তা সহিংসতা বর্জন এবং শান্তি বজায় রাখা। একে অন্যের ব্যক্তিগত ও সামাজিক পরিসরকে সম্মান করা। আমাদের মনোভাব ও আচরণে দায়বদ্ধতা, মানবাধিকার, সামাজিক এবং গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদকে শ্রদ্ধা করা। গণতান্ত্রিক রূপান্তর, ন্যায়সঙ্গত অর্থনীতি ও সামাজিক সংহতির আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করা।‘

তিনি আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচনে সংঘাতমুক্ত শান্তিপূর্ণ ভোট প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। সংস্কারের জন্য গণভোটের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবর্তনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উসকানি, সহিংসতা পরিহার ও প্রতিহত করা, নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করে গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সবাইকে কাজ করতে হবে। শান্তি, সামাজিক সংহতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে দায়িত্বশীল আচরণ এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।’

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত নির্বাচনের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ ও হুমকি রয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার উসকানি, সহিংসতা, মানবাধিকারবিরোধী কার্যক্রম, ঘৃণা, সামাজিক বিভাজন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এবং ঘৃণাসূচক বক্তব্য প্রচার রোধে রাজনৈতিক সচেতনতার পাশাপাশি সরকারের কঠোরতা গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের জন্য সকলের আন্তরিক ও সক্রিয় প্রচেষ্টা থাকা চাই।’

সভায় উপস্থিত প্রার্থীরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। রংপুর-৩ আসনের জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাহবুবুর রহমান বেলাল বলেন, ‘১৬ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এ কারণে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে অনেক নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আবেগের বশে শোডাউন ও মিছিল করেছে। আমরা চেষ্টা করেছি আচরণবিধি মেনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার।’

তিনি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জুলাই ঐক্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন এবং গণভোটে ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে রায় দেওয়ার আহ্বান জানান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল বলেন, ‘‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে সকল দলকে জুলাই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে হবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে বিজয় নিশ্চিত করতে পারলে আগামীর বাংলাদেশ হবে নিরাপদ।” তিনি পিছিয়ে পড়া রংপুরে বৈষম্য দূর করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন।

বিএনপি প্রার্থীর প্রতিনিধি ড. রোকনুজ্জামান বলেন, “তারেক রহমানের ‘আই হ্যাভ এ প্লান’ এবং রাষ্ট্রসংস্কারে ৩১ দফার আলোকে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা হবে। বিগত সময়ে একটি রাজনৈতিক দল রংপুরের মানুষকে বোকা বানিয়ে ভোট নিয়ে উন্নয়ন করেনি, এবার তার জবাব দেবে জনগণ। ধানের শীষের পক্ষে ভোট বিপ্লব হবে।”

স্বতন্ত্র প্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রাণী বলেন, ‘আমি পিছিয়ে পড়া রংপুরসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এজন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।’ তিনি গণভোটের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়াকে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন।

এছাড়া সভায় বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের রংপুর মহানগর আহ্বায়ক আব্দুল জব্বার, জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগরের প্রচার-মিডিয়া বিষয়ক সম্পাদক ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট কাওছার আলী, রংপুর জেলা সুজনের সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আমিন, সংগঠক বেলাল আহমেদ, নারী উদ্যোক্তা নাজমুন নাহার, শিক্ষার্থী সিয়াম প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর