Wednesday 31 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে খালেদা জিয়ার জানাজা সম্পন্ন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:০৬ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:০৩

বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা সম্পন্ন।

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টা ০৫ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার মাঠ এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লাখো মানুষের অংশগ্রহণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

লাখো মানুষের অংশগ্রহণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সারাবাংলা

জানাজার সময় গোটা মানিক মিয়া এভিনিউ, সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার পুরো মাঠসহ সব এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জানাজা হয় দেশনেত্রীর খালেদা জিয়ার এই জানাজা।

জানাজার নামাজ পড়ান জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

খালেদা জিয়ার জানাজার নামাজ পড়ান জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। এ সময় পুরো এলাকায় শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জানাজায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বসিরউদ্দীন, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখ লাখ মানুষ জানাজায় অংশ নিয়ে খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

বিজ্ঞাপন

জানাজায় অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, পাকিস্তানের স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, জামায়াতে ইসলামীর আমির আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ফায়জুল হক, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, জাতীয় নাগরিক পার্টির হাসনাত আবদুল্লাহ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছেলে শামীম সাঈদী, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম।

মায়ের জানাজায় সবার কাছে দোয়া চান বড় ছেলে তারেক রহমান।

মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চান তার বড় ছেলে তারেক রহমান। জানাজার সময় তারেক রহমানের ডান পাশে দাড়ান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বাম পাশে দাড়ান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সভাপতি নাহিদ ইসলাম। প্রধান উপদেষ্টার ডান পাশে দাড়ান প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী এবং তার ডান পাশে দাড়ান জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। নাহিদ ইসলামের বাম পাশে দাড়ান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ লাখ লাখ সাধারণ মানুষের ঢল নামে। একদিকে ফার্মগেট, বিজয়সরনি, অপরদিকে মিরপুর রোড পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়।

জানাজা উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও আশপাশে নেওয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দেন।

জানাজার নামাজ শেষে তাকে দাফনের জন্য নেওয়া হয় জিয়া উদ্যানে তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে। সেখানে জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতেই সেখানে কবর খননের কাজ শুরু হয়। রাতে কবর খনন কাজ পরিদর্শন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাথে ছিলেন যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। রাতে সাংবাদিকদের সাথে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি এসেছিলাম কবর খনন কাজ দেখতে। আশা করি রাতের মধ্যে কবর খননের কাজ শেষ হবে।

এর আগে বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার কিছু আগে এভারকেয়ার হাসপাতালের হিমঘর থেকে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়ার মরদেহ গুলশানে তারেক রহমানের বাসভবনে নেওয়া হয়। সেখানে তার আত্মীয় স্বজনকে মরদেহ দেখানোর পর নেওয়া হয় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়।

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মানুষের ঢল।

মরদেহ নিয়ে আসার সময় পরিবারের সদস্য, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। মরদেহ সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনা হলে সেখানে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে সকাল এগারোটার দিকে তারেক রহমানের বাসভবন থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। সেখান থেকে ২টা ৪৫ মিনিটের সময় জানাজাস্থলে নেওয়া হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

জানাজার আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কর্মময় জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণী পাঠ করেন।

গত ২৩ নভেম্বর গুলশানের বাসায় শারিরীকভাবে অসুস্থ হলে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৪০দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার(৩০ ডিসেম্বর) সকাল ছয়টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন একই সঙ্গে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয় খালেদা জিয়ার মরদেহ জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে। এসময় সাধারণ জনগণকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

বিশেষ ব্যবস্থায় জানাজায় অংশ নেন নারীরা

বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় নারীদের জন্য পৃথকভাবে এ বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। নারীরা সেখানে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবেশে জানাজায় অংশ নেন। সেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নারী নেত্রী ও সাধারণ নারীরা অংশ নেন।

বিশেষ নিরাপত্তায় ছিল বিজিবি

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন কার্যক্রমকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে এভারকেয়ার হাসপাতাল, জাতীয় সংসদ ভবন ও জিয়া উদ্যান এলাকায় ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

সারাবাংলা/এমএমএইচ/এমপি
বিজ্ঞাপন

জিয়া উদ্যানে খালেদা জিয়ার মরদেহ
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:২০

আরো

সম্পর্কিত খবর