সিসি ফুটেজে লাশ ফেলার দৃশ্য, শনাক্ত ৪ জন নজরদারিতে
১৬ জুলাই ২০১৮ ২১:১৮ | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ২১:২১
।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ইউসুফ সরদার সোহেল ওরফে সুন্দরী সোহেলই তার ছেলেকে হত্যা করেছে— এমনটিই অভিযোগ কাজী রাশেদ হোসেনের মা রাবেয়া বেগমের। এমন অভিযোগের সত্যতা পুলিশও পেয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে পুলিশ রাশেদকে হত্যার পর তার মরদেহ ফেলে দেওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলা’কে বলেন, সুন্দরী সোহেলের অনলাইন নিউজ পোর্টাল অফিসের ভেতরে ও বাইরে যে সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল, গোয়েন্দা পুলিশ রোববার (১৫ জুলাই) সকালে গিয়ে তার কিছুই পায়নি। সব এলোমেলো ও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পেয়েছে। তবে পাশের ভবনের আরেকটি সিসি ক্যামেরার দৃশ্য সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, সিসিটিভির ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, দু’জন ওয়ালের ভেতরের দিক থেকে বাইরে দাঁড়ানো দু’জনের কাছে রাশেদের মরদেহ পার করেন। পরে তারা চারজন হাতে পলিথিন পেঁচিয়ে রাশেদের লাশ সোহেলের অফিসের পেছনের গলিতে ফেলে দেন, যেন ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ওই চার জনের হাতের ছাপ না আসে।
সিসিটিভি ফুটেজে যে চার জনকে দেখা গেছে তারা হলেন— মহাখালীর দক্ষিণ পাড়ার ফিরোজ, আকিজপাড়ার দীপু, আমতলীর সন্ত্রাসী হাসু ও সোহেলের সহযোগী রবি।
পুলিশ বলছে, আসামীদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে। যেকোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে।
এর আগে, রোববার (১৫ জুলাই) ভোরে দিকে মহাখালী জিপি-গ-৪২ নম্বর বাসার গলির মাথায় রাশেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ দেখতে পায় পরিবারের সদস্যরা। ওই বাসাতেই সপরিবারে থাকতেন রাশেদ।
রাশেদের স্ত্রী মৌসুমী আক্তারের দাবি, সুন্দরী সোহেলের সাথে সবসময় চলাফেরা করত রাশেদ। প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে রাশেদ অনেক নির্যাতন সহ্য করত। কিছুদিন হলো রাশেদ তার সাথে আর কোনো কাজ করবে না বলে জানিয়ে দেন সোহেলকে। তখন সোহেল উত্তরে বলেছিল, তুই কোথাও যেতে পারবি না। তোকে আমার কাছেই থাকতে হবে। অন্য কোথাও গেলে তোকে জানে মেরে ফেলব।
রাশেদের মা রাবেয়া বেগম সারাবাংলা’কে বলেন, ‘রাশেদকে মাঝে মধ্যেই মারধর করত সোহেল। তবুও রাশেদ কিছু বলত না। সোহেল প্রায় রাতেই ড্রিংকস করত। তখন রাশেদকে বাসায় আসতে দিত না। অফিসে তার সাথে থাকতে হতো।’ সোহেলই তার ছেলেকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি। ‘সোহেল আমার ছেলেকে হত্যা না করলে ওর বাবা-মা পর্যন্ত পলাতক কেন?’, জানতে চান রাবেয়া বেগম।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গুলশান, বনানী ও মহাখালী এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মাদকের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের টাকা ভাগাভাগি নিয়েই রাশেদকে হত্যা করা হতে পারে। তদন্ত চলছে। জড়িতরা অবশ্যই ধরা পড়বে।
এদিকে, রোববার (১৫ জুলাই) ময়নাতদন্ত শেষে রাশেদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাশেদের শরীরের বুক ও পেট থেকে চারটি গুলি পাওয়া গেছে। এছাড়া তার শরীরে অনেক নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
একই দিন বিকেলে বনানী থানায় রাশেদের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার ইউসুফ সরদার সোহেলকে প্রধান আসামি করে ছয় জনের নামে মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীন আলম সারাবাংলা’কে বলেন, পরিবার যাদের সন্দেহ করছে তারা সবাই পলাতক রয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল রহস্য বের হবে বলে মনে করছেন তিনি।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন কাজী রাশেদ হোসেন। সোহেলের পরামর্শে প্রায় পাঁচ বছর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফেরেন। তখন থেকে সোহেলের সাথেই চলাফেরা করতেন তিনি। চার বছর আগে সৈয়দপুরের মেয়ে মৌসুমী আক্তারকে বিয়ে করেন রাশেদ। দুই বছর আগে তাদের একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। চার ভাইয়ের মধ্যে রাশেদ বড়। তাদের আরও দুই বোন রয়েছেন। বাবা ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকোতে গাড়ি চালান। মা গৃহিণী।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর