Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইংরেজি-বাংলা বিভ্রাটে সোনার পরিমাণে তারতম্য: বাংলাদেশ ব্যাংক


১৭ জুলাই ২০১৮ ১৯:২৮

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে ‘সোনা কারসাজি’র ঘটনাকে ‘ক্ল্যারিক্যাল মিসটেকে ভুল প্রতিবেদন’ বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সোনার পরিমাণ ৪০ শতাংশ থাকলেও তাকে ইংরেজি ভাষার ‘80’ মনে করে কেরানির ভুলে ৮০ শতাংশ বলে উল্লেখ করায় এই হেরফের ঘটেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ভল্টের নিরাপত্তায় কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। জাতীয়ভাবে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে সোনার গুণগত মান নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন উঠেছে।

মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন এ দাবি করেন। এ সময় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ, মহাব্যবস্থাপক (কারেন্সি) আওলাদ হোসেন চৌধুরীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিতে এই জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দৈবচয়ন ভিত্তিতে নির্বাচন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সোনা পরিণত হয়েছে সংকর বা মিশ্র ধাতুতে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২২ ক্যারেট সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট।

সোনা পরিমাপের ক্ষেত্রে উল্লেখ করা পরিমাণে ইংরেজি ও বাংলা ভাষার হেরফের হয়েছে বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, সোনার চাকতির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ সোনা থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ক্ল্যারিকেল মিসটেকের (করণিকের ভুল)’ কারণে তা ৮০ শতাংশ বলে নথিভুক্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে স্বর্ণকার ৪০ শতাংশ সোনা রয়েছে উল্লেখ করলেও কেরানি তা ইংরেজি ‘80’ মনে করে ৮০ শতাংশ বলে নথিভুক্ত করেন। তবে শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদনে ওই চাকতিতে ৪৬ শতাংশ সোনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এই তথ্যবিচ্যুতির কারণেই সোনার ওজন কমেছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ওই চাকতিতে শুল্ক গোয়েন্দার দাবি করা স্বর্ণের চেয়ে বেশি সোনা রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন বলেন, ‘২২ ক্যারেটের স্বর্ণ হয়ে গেল ১৮ ক্যারেট, এটি যথাযথ নয়। কষ্টিপাথরের মাধ্যমে (ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে) আমরা সোনার মান নির্ধারণ করে থাকি। ম্যানুয়াল ও মেশিনে গণনার কারণে কিছুটা তারতাম্য ঘটেছে। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর আবার নিজেদের মেশিন দিয়েও পরিমাপ করেনি।  বাইরে থেকে আনা মেশিনে ওজন করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে নিরাপত্তা, ভল্টের যে নিরাপত্তা, তা সুপার, সুপার এবং সুপার।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, যথাযথ নিরাপত্তা পাস ছাড়া কেউ সেখানে (ভল্টে) ঢুকতে পারে না। তিন বা চার স্তরের নিরাপত্তা রয়েছে। সিসি ক্যামেরা ছাড়াও পুলিশ বাহিনী নিরাপত্তায় থাকে। কেউ এখান থেকে সোনার চাকতি নিয়ে যাবে, এটা হতে পারে না।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ ছাড়া আমরা কোনো স্বর্ণ রাখি না। আবার নির্দেশ ছাড়াও নিলামে তুলি না। ভল্টে গচ্ছিত আছে। প্রশ্ন কিন্তু সেই গচ্ছিত জিনিস নিয়েই উঠেছে। আবার যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তা কিন্তু দৈবচয়নের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে বলা হয়, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরকে অনুরোধ করা হয়েছিল তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যাচাই করতে। কিন্তু তারা সে সুযোগ না দিয়েই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। পারমাণবিক কমিশনের মাধ্যমে মান যাচাইয়ের কথা বলা হয়েছিল। আবার শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরও বাইরের মেশিন দিয়ে সোনার মান যাচাই করেছে।

তাহলে কি শুল্ক গোয়েন্দার ওই প্রতিবেদন ভুল এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কি সেটা প্রত্যাখ্যান করছে?— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার (মহাব্যবস্থাপক) আওলাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ভুল হতে পারে। কারণ বাইরে থেকে ভাড়া করা মেশিন এনে তার মাধ্যমে তৈরি করা প্রতিবেদন মানার সুযোগ নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এখনও কেন সনাতনি পদ্ধতিতে সোনা পরিমাণ করা হয়—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল থেকেই এটি হয়ে আসছে। আগে কোনো প্রশ্ন উঠেনি। এবারই উঠেছে। মেশিনেও সবসময় সঠিক পরিমাণ পাওয়া যায় না। কারণ বাতাসের কারণেও স্বর্ণের ওজনে তারতাম্য ঘটে।’

কোন জুয়েলার্সের স্বর্ণকার বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা পরিমাপ করে—  জানতে চাইলে তারা জানান, শখ জুয়েলার্স। এছাড়া এনবিআর চেয়ারম্যানের ডিও লেটারের প্রশ্নের উত্তরও লিখিতভাবে দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর