‘টাকা লুটে ব্যর্থ হয়ে মায়ের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে শিশু খুন’
১৭ জুলাই ২০১৮ ১৯:৫১ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ২০:৫৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় নয় মাসের শিশুকে মায়ের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে পানিতে চুবিয়ে নির্মমভাবে খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। গত ১৫ জুন বিকেল ৫টার দিকে নগরীর পতেঙ্গা থানার সতীশ মহাজন লেইনে রিপন মিত্রের বাসায় এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, টাকা লুট করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে মায়ের কোল থেকে শিশুটিকে কেড়ে নিয়ে হত্যা করেছে ২ দুর্বৃত্ত।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো.আরেফিন জুয়েল সারাবাংলাকে জানান, ঘটনায় মোট ৮জন জড়িত। প্রায় একমাস ধরে তদন্তের পর ৪জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন, সাজ্জাদ হোসেন (২৪), সাইফুল ইসলাম (২৪), মো.আলী আজগর রুবেল প্রকাশ(২৭) ও মো.হাবিব (১৮)। যাদের এখনও গ্রেফতার করা যায়নি তারা হলেন, হানিফ মির্জা, মো. রুবেল প্রকাশ, বাবু ও নজরুল।
আজগর রুবেল ও হাবিবকে মঙ্গলবার(১৭ জুলাই) বিকেলে আটক করা হয়েছে। তাদের বুধবার আদালতে হাজির করা হবে। সাজ্জাদ ও সাইফুল ১৬ জুলাই রাতে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ১৫ জুন ঈদুল ফিতরের আগের দিন রিপন মিত্রের বাসায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে দুই যুবক। তারা রিপনের স্ত্রী চম্পা মিত্রের কোল থেকে মেয়ে নিঝুম মিত্র তরীকে কেড়ে নিয়ে বাথরুমে রাখা পানিভর্তি বালতিতে চুবিয়ে হত্যা করে। এসময় তারা একটি সোনার আংটি ও ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এই ঘটনায় রিপন মিত্র বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতার হওয়া হাবিব নিহত রিপন মিত্রের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি।
নগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (কর্ণফুলী জোন) জাহেদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, শিশুটির বাবা রিপন মিত্র একজন ব্যবসায়ী। তাদের বাসায় সবসময় দুই-তিন লাখ টাকা থাকে। রিপন মিত্রের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি হাবিব পেশাদার ডাকাতদের এই খবর দেয় ও টাকা লুট করার জন্য বলেন। সেই অনুযায়ী তাদের বাসায় ডাকাতি করতে ঢুকেছিল দুই যুবক। বাইরে পাহারায় ছিল আরও পাঁচজন।
উপ-কমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, আলী আজগর রুবেল ও হানিফ মির্জা বাসায় প্রবেশ করেছিল। হানিফ শিশুটির মায়ের গলায় ছুরি ধরে। এসময় হানিফ বলে-টাকা দে, না হলে তোর মেয়েকে মেরে ফেলব। কিন্তু ওই মহিলা কোনোভাবেই টাকা কোথায় আছে, সেটা প্রকাশ করেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিশুটিকে পানিতে চুবিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে হানিফ। রুবেল ওই মহিলার আঙ্গুল থেকে একটি সোনার আংটি খুলে নেন। একটি আলমারির ড্রয়ার থেকে ২০ হাজার টাকা নেন।
আসামীদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে সহকারি কমিশনার জাহেদুল ইসলাম বলেন, যে বাড়িতে ঘটনা ঘটেছে তার সামনের রাস্তায় একটি ফার্মেসিতে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। সেখান থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করে এক যুবককে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তার পিছনে ছিল আরও ৪-৫ জন। ওই যুবককে টার্গেট করে তথ্য পাওয় যায়। যুবকটি হলেন গ্রেফতার হওয়া সাজ্জাদ। এভাবে ঘটনায় জড়িত বাকি সাতজনের তথ্য বের করা হয়।
তিনি আরও বলেন, হাবিব গ্রেফতার হওয়া ডাকাতদের জানিয়েছে, বিকেলে বাসায় শিশুটির মা ছাড়া কেউ থাকে না। ওই বাসায় ডাকাতির জন্য ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় তারা সাতজন পতেঙ্গা থানার নারিকেল তলা এলাকায় বসে পরিকল্পনা করে।
হত্যাকাণ্ডের পরও হাবিব স্বাভাবিকভাবে রিপন মিত্রের প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে যাচ্ছিল। তার আচরণে কোন পরিবর্তন ঘটেনি। রিপন মিত্রের প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ