কোটা সংস্কার : চবি’র দুই শিক্ষকের চাকরিচ্যুতি চান ছাত্রলীগ নেতা
১৭ জুলাই ২০১৮ ২২:০৫
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার ইস্যুতে দুই শিক্ষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান বলে অভিযোগ করে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর টিপু। মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) দেওয়া এক স্মারকলিপিতে দুই শিক্ষকের চাকুরিচ্যুতি চাওয়া হয়।
ওই দুই শিক্ষক হলেন, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক আলী আর রাজী এবং সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম। অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তারা বলেছেন, গণতান্ত্রিক অধিকার অনুযায়ী কথা বলবেন।
আলমগীর টিপু সারাবাংলাকে বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের কোন প্রভাব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। কিন্তু দুজন শিক্ষক ফেসবুকে বিভিন্ন উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে পরিস্থিতি গরম করার চেষ্টা করছেন। মাইদুল ইসলাম ফেসবুকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও হাসিঠাট্টা করেন। আমরা এজন্য উপাচার্যের কাছে বিচার চেয়েছি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, মাইদুল ইসলাম শেখ হাসিনাকে নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কটূক্তি করেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী জামায়াত-শিবির ও বিএনপির যৌথ নীলনকশার অংশ হিসেবে ফেসবুকে উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছেন।
জানতে চাইলে মাইদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগ খুবই দু:খজনক। আশা করি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেটা সত্য, সেটাই গ্রহণ করবে। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে তো গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলা হয়। সেই হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অন্তত বুঝবেন যে, গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে যে কেউ যে কোন মত প্রকাশ করতে পারেন। কোটা সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষেও বলতে পারেন।’
শেখ হাসিনাকে কটূক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কটূক্তি করিনি। ফেসবুকে যা লিখেছি তা মোরাল স্ট্যান্ডার্ড থেকে লিখেছি।’
শিক্ষক আলী আর রাজী’র বিষয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়, তিনি সুকৌশলে সহিংসতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে লন্ডভন্ড করে দেওয়ার জন্য ছাত্রদের উস্কানি দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিয়মিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বিষোদগার করতেন। আমরা জানতে পেরেছি, তিনি ছাত্রদের তাঁর কক্ষে ডেকে নিয়ে নিয়মিত সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক দিকনির্দেশনা প্রদান করছেন।
স্মারকলিপির শেষ অংশে আলমগীর টিপু বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুযায়ী দুই শিক্ষককে চাকুরিচ্যুত করার জন্য উপাচার্যের কাছে অনুরোধ করেন।
জানতে চাইলে আলী আর রাজী সারাবাংলাকে বলেন, ‘যত হুমকি ধমকিই আসুক, আমি শিক্ষকদের কথা বলার অধিকারের পক্ষে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব। প্রশাসন যদি এসব বিষয়ে প্রশ্রয় দেয়, সেটা হবে দু:খজনক।’
ক্যাম্পাসে দুই গ্রুপে ক্রমাগত সংঘাতের মুখে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে গত বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল, যে কমিটির সভাপতি ছিলেন আলমগীর টিপু। সভাপতি থাকা অবস্থায় টিপুর বিরুদ্ধে নিজ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। এর আগে ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কার্যালয়ের সামনে টেন্ডার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুজন নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলারও আসামি ছিলেন টিপু।
সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ