Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিগ্রি নেই, তবুও তিনি ‘বড় ডাক্তার’


১৮ জুলাই ২০১৮ ০৮:১৫

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: তার নিজস্ব রাইটিং প্যাডে প্রেসক্রিপশনে লেখা রয়েছে মনোবিজ্ঞান স্নাতক এম ফিল (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)। আর তার পরিচয়- চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী, জাতীয় মানসিক হাসপাতাল ও পিজি হাসপাতাল, ঢাকা। কিন্তু এই দুই হাসপাতালে তিনি চিকিৎসক হিসেবে কখনওই কর্মরত ছিলেন না। তিনি সিরাজগঞ্জের আভিসিনা হাসপাতালে কর্মরত ফারজানা ইয়াসমিন।

বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি বলছে, অসত্য কথা প্রচার করে মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলা দুর্ভাগ্যজনক, আমরা খুবই ‘শকড’ এবং বিষয়টি পুরো ডাক্তার সমাজের জন্য লজ্জাজনক। ফারজানা ইয়াসমিনের যে প্রেসক্রিপশন সারাবাংলা’র হাতে এসেছে, সেটিতে লেখা- তিনি সিরাজগঞ্জের সোহাগ ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সে কর্মরত।

যোগাযোগ করা হলে সোহাগ ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সের কর্ণধার মো. সোহাগ সারাবাংলা’কে বলেন, ফারজানা ইয়াসমিন এখানে ছিলেন। কিন্তু এখন আর নেই। আমার এখানে কিছুদিন রোগীদের কাউন্সেলিং করেছেন। কিন্তু তার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তার সঙ্গে আর কোনও সম্পৃক্ততা নেই।

তবে সিরাজগঞ্জের সুপরিচিত আভিসিনা হাসপাতালে তিনি কর্মরত বলে জানান মো. সোহাগ। এই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে বলেও জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, এই হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড়শ রোগী আসেন। ফারজানা ইয়াসমিন সেখানে বেশ ‘বড় ডাক্তার’ হিসেবেই চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) অ্যাক্ট অনুযায়ী, চিকিৎসক না হয়ে কেউ ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন না। মেডিকেল ও ডেন্টাল বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদেরই কেবল এই অনুমোদন দেয় বিএমডিসি।

বিজ্ঞাপন

অথচ ফারজানা ইয়াসমিন কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ থেকে এক বছরের একটি কোর্স করেছেন। আর এই যোগ্যতাতেই তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক সেজে ওষুধ দিয়ে যাচ্ছেন রোগীদের। আর এতে করে রোগীরা ভুল ওষুধে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরছেন, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন সারাবাংলা’কে বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেছেন। তবে তিনি যেহেতু একজন সাইকোলজিস্ট, তার ওষুধ লেখার কথা না। কিন্তু তিনি এই কাজ করে যাচ্ছেন।

জহির বলেন, ফারজানা ইয়াসমিন গত কয়েকবছর ধরেই এ কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৪ সালে তার দেওয়া একটি প্রেসক্রিপশন নজরে আসে এবং আমাদের একজন শিক্ষক তাকে এ বিষয়ে সতর্ক করেন। তখন তিনি আর এ ধরনের কাজ করবেন না বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই একই কাজ করে যাচ্ছেন ফারজানা।

জহির আরও স্পষ্ট করে বলেন, তিনি যে ওষুধ লিখছেন এটা খুবই আনফেয়ার এবং একজন সাইকোলজিস্ট হয়ে ওষুধ লেখার অধিকার তার নেই।


‘বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলছি, গত দশ বছর ধরে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সঙ্গে ফারজানা ইসলামের কোনো যোগাযোগ নেই, কোনো ধরণের সম্পৃক্ততাও নেই। আমি বলতে চাই, ফারজানা ইয়াসমিন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নন। তিনি কোনোভাবেই আমাদের সমিতির সঙ্গে যুক্ত নন।’- বলেন জহির উদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

সোসাইটির পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে জহির বলেন, তাকে আরেকবার আমরা সুযোগ দিতে চাই। শিক্ষকদের তার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু তিনি কারও ফোন ধরছেন না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের একজন নাগরিক যিনি চিকিৎসক না হয়েও প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন- এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেছেন। এখন প্রশাসন ও বিএমডিসি’র দায়িত্ব তাকে আইনের আওতায় আনা। নৈতিকতার কথা চিন্তা করে এবং মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে ফারজানা ইসলামের বিষয়টি ক্লিনিক্যাল সোসাইটির পক্ষ থেকে আমরা প্রশাসন ও বিএমডিসিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে অনুরোধ করেছি।

ফারজানা ইয়াসমিনের প্রেসক্রিপশনে পিজি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালের পরিচয় লেখা রয়েছে। সে হিসাবে নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারজানার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক হওয়ার কথা। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কিনা- জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব সারাবাংলা’কে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগবিদ্যা বিভাগে এই নামে কোনো চিকিৎসক নেই।

ফারজানা ইয়াসমিন যা করে চলেছেন, তাকে এক কথায় অপরাধ মন্তব্য করে অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, কোনো চিকিৎসক ও বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন ছাড়া আরও কেউ ওষুধ লিখতে পারেন না।

জানতে চাইলে বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রার ডা. জাহিদুর রহমান বসুনিয়া সারাবাংলা’কে বলেন, তিনি তো চিকিৎসকই নন। আমরা শুধু চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। ফলে তার বিরুদ্ধে তো আমরাও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে তিনি যেটা করছেন, সেটা রীতিমতো অপরাধ। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ভূমিকা নিতে হবে।

ফারজানা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো নিয়ে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর