চট্টগ্রামে ‘সামান্য উন্নতি’, নগরের চেয়ে পিছিয়ে জেলা
১৯ জুলাই ২০১৮ ১৫:৩৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় আগের বছরের চেয়ে ‘সামান্য ভালো’ ফল করেছেন শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবার পাশের হার ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গতবছর পাশের হার ছিল ৬১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। পাশের হার বেড়েছে ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
আগের বছরের তুলনায় জিপিএ ফাইভ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও এ বছর বেড়েছে। এ বছর জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ১ হাজার ৬১৩ জন শিক্ষার্থী। গতবছর পেয়েছিলেন ১ হাজার ৩৯১ জন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) দুপুর দেড়টায় ফলাফল ঘোষণা করে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, ‘পাশের হার গতবছরের চেয়ে সামান্য বেড়েছে। বলা যেতে পারে, এবার সামান্য উন্নতি হয়েছে। জিপিএ ফাইভও সামান্য বেড়েছে। তবে সার্বিক ফলাফলে আমাদের সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ প্রতি ১০০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে তিনজনও জিপিএ ফাইভ পায়নি।’
বৃহত্তর চট্টগ্রামে পাশের ক্ষেত্রে এবারও ছাত্রীরা ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। এবার ৬৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ ছাত্রী পাশ করেছেন। ছাত্র পাশ করেছেন ৫৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
বিজ্ঞান বিভাগে পাশের হার ৭৩ দশমিক ১১ শতাংশ। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৫১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাশের হার ৬৮ দশমিক শূন্য এক শতাংশ।
বৃহত্তর চট্টগ্রামের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে। সেখানে পাশের হার ৩৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। রাঙামাটি জেলায় পাশের হার ৪৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় পাশের হার ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
চট্টগ্রাম মহানগরীর তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম জেলা। চট্টগ্রাম মহানগরে পাশের হার ৭৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাশের হার ৫৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, ‘চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার ২৫৩টি কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে পাশের হার ৫০ শতাংশের নিচে এমন কলেজের সংখ্যা ১৭৪টি। এর মধ্যে দেখা যাচ্ছে, মহানগরের কলেজগুলোর চেয়ে জেলা অনেক পিছিয়ে আছে। আমরা যেসব কলেজে শিক্ষার্থীরা খারাপ ফল করেছে সেসব কলেজকে ডাকব। তাদের পাঠদান উন্নত করার বিষয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেব।’
চট্টগ্রামে শতভাগ পাশ করেছে এমন কলেজের সংখ্যা ৫টি। এগুলো হলো হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজ, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, বর্ডার গার্ড স্কুল এন্ড কলেজ এবং সীতাকুণ্ড গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজ।
সীতাকুণ্ড গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজ থেকে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেন বলে জানান মাহবুব হাসান।
আর পাশের হার শূন্য থাকা কলেজ পাওয়া গেছে চট্টগ্রামে শুধু একটি। চট্টগ্রাম নগরীতে কসমোপলিটন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে একজন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। তিনি ফেল করায় প্রতিষ্ঠানটি পাশের হার শূন্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাহবুব হাসান।
পাশের হার এবং জিপিএ ফাইভ পাওয়ার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে চট্টগ্রাম মহানগরীর নামিদামি কলেজগুলো।
চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ৮৮৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ৪৯৩ জন। সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে ১৬৯১ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ৩২৯ জন।
চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে ৭৮৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ১৫৫ জন। চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে ২ হাজার ৫৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৭৯ জন জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন। সিটি কলেজে গত বছরের চেয়ে জিপিএ ফাইভ কমেছে।
চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে ১১২৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ৭৭ জন। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে ৫৫ জন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ৫১ জন।
চট্টগ্রাম মহানগরে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ১৪২০ জন, চট্টগ্রাম জেলায় ১৪৪ জন, কক্সবাজারে ৩৮ জন, রাঙামাটিতে একজন, বান্দরবানে ১১ জন এবং খাগড়াছড়িতে ৪ জন।
মাহবুব হাসান বলেন, মহানগরের বাইরে পাঠদান ভাল না হওয়ার আরেকটা উদাহরণ হচ্ছে এই জিপিএ ফাইভ প্রাপ্তি। দেখা গেছে, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন কলেজগুলোতে যত জিপিএ ফাইভ পেয়েছে তার ৮০ শতাংশই মহানগরে।
ফল ঘোষণার সময় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব, কলেজ পরিদর্শকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/একে