নটরডেমে উচ্ছ্বাস, উৎসব নেই আইডিয়াল ক্যাম্পাসে
১৯ জুলাই ২০১৮ ১৮:১৯
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রাজধানীর নাম করা দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নটরডেম কলেজ ও মতিঝিল আইডিয়াল কলেজ। প্রথমটি ছেলে এবং দ্বিতীয়টি মেয়েদের জন্য আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর দুই ক্যাম্পাসের চিত্র বিপরীতমুখী।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণার পর নটরডেম কলেজ ক্যাম্পাসে যখন আনন্দে ভাসছিল, তখন মতিঝিলে আইডিয়াল কলেজ ক্যাম্পাস দেখা যায় অনেকটাই উচ্ছ্বাসহীন। সেখানে ছাত্রীদের উপস্থিতিও তুলনামূলকভাবে কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল ও ইন্টারনেটে ফল প্রকাশের পর থেকে ধীরে ধীরে উৎসব কমছে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে। এছাড়া এ বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় তার প্রভাবও পড়েছে ফলাফলের সার্বিক উদযাপনে।
নটরডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে তারেক জামিল খান নাবিল। ফলাফল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে জড়িয়ে ধরে মা আর বোন; তাদের চোখে ছিল আনন্দ অশ্রু। পরক্ষণেই নাবিল উৎসবে মেতে ওঠে বন্ধুদের সঙ্গে।
কলেজের মাঠে কথা হলে নাবিল সারাবাংলা’কে জানায়, ‘এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার নয়। বাংলায় কাটায় কাটায় ১৬০ পেয়েছি। একের জন্যও অনেক বন্ধুর গোল্ডেন মিস হয়েছে। বাংলা নিয়ে চিন্তা ছিল। কিন্তু ফলাফল পাওয়ার পর খুবই ভালো লাগছে।’
‘টঙ্গীতে বাড়ি হলেও বাবা-মা ও বোনকে থাকতে হয়েছে আরামবাগের ভাড়া বাসায়। আমার জন্য পরিবারের সবাই এখানে থেকেছে। বোনকেও থাকতে হয়েছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’— এমনই ছিল এই শিক্ষার্থীর ভাষ্য।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাইলে নাবিল বলে, ‘মেডিকেলে পড়তে চাই। রেটিনায় কোচিং করছি।’
কথা হয় নাবিলের মা নাজমা আক্তার বেবির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছেলের রেজাল্টে আমরা খুবই খুশি। ছেলেকে ডাক্তার হিসেবে দেখাই আমাদের প্রত্যাশা।’ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ধারবাহিকতা বন্ধ হওয়ায় এ সময় তিনি সরকার ও শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
নটরডেম কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ইশরাত হোসেন জয়। ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুদের সঙ্গে মেতে ওঠে আনন্দ উৎসবে। অনেকটা নেচে গেয়ে পার করে দীর্ঘ সময়।
জয় জানায়, ফলাফল তার প্রত্যাশিতই। তার মা রুমা সারাবাংলা’কে বলেন, ‘অনভূতিটাই অন্য রকম। প্রশ্ন কঠিন হলেও ছেলের রেজাল্ট প্রত্যাশামতোই এসেছে।’
একই কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সালমান। তার মা জানালেন, ছেলের উদ্দেশ্য কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জয় বসাক নামের আরেক শিক্ষার্থীও বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সূত্রাপুরের বাসিন্দা তার মা শিল্পী বসাক সারাবাংলা’কে বলেন, ‘ছেলের রেজাল্ট পেয়ে খুব ভালো লাগছে। আনন্দ লাগছে। আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। ছেলের ইচ্ছা আইবিএতে পড়বে।’
এ সময় মুঠোফোনে হাসিমুখে এই অভিভাবককে পরিবারের অন্য সদস্যদের ছেলের ফলাফল জানাতে দেখা যায়। শিল্পী বসাককে জড়িয়ে ধরতেও দেখা যায় কয়েকজন অভিভাবককে। তাদের চোখেমুখে আর অবয়বে ছিল অন্য রকম অনন্দ।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, নটরডেম কলেজের ৩ হাজার ৮৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এবার পাস করেছে ৩ হাজার ৫৪ জন। পাসের হার ৯৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৬৯ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১ হাজার ৮৩৭, বাণিজ্য থেকে ২০৩ ও মানবিক বিভাগ থেকে ২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত রোজারিও সারাবাংলা’কে বলেন, ‘সারাদেশের তুলনায় আমাদের রেজাল্ট বেশ ভালো। এবার আমাদের জিপিএ-৫-এর পরিমাণ একটু বেড়েছে। তবে আমাদের রেজাল্ট প্রত্যেক বছর একই রকম থাকে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল এবার আমরা তা থেকে বেরিয়ে এসেছি। এতে ফলাফলে কিছুটা বিপর্যয় হলেও এটি ইতিবাচক।
এদিকে, ফলাফল ঘোষণার পর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, কলেজ প্রাঙ্গণ অনেকটাই ফাঁকা। ছাত্রীদের উপস্থিতি খুবই কম। ফলাফল ভালো হলেও নেই তেমন উচ্ছ্বাস। তবে কিছু শিক্ষার্থী ছিল ক্যাম্পাসে। তারা অভিভাবক কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে খোশগল্পে ব্যস্ত।
সেখানে কথা হয় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৪.৪২ পাওয়া শিক্ষার্থী মাহিমা আক্তারের সঙ্গে। মিতু জানায়, ফলাফল কিছুটা ভালো হয়েছে। তবে আরেকটু ভালো করতে পারলে ভালো লাগত।’ সে জানায়, এবার উৎসব নেই। বন্ধুদের অনেকেই আসেনি।
মিতুর মা সালমা আক্তার বলেন, ‘পরীক্ষার সময় মেয়ে কিছুটা অসুস্থ ছিল। এছাড়া এবার প্রশ্ন কঠিন হয়েছে। তবে আমরা আরেকটু ভালো ফল প্রত্যাশা করছিলাম।’
একই কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ফায়জা জুনায়েত। সে জানায়, প্রত্যাশা পূরণ হওয়ায় সে খুব খুশি। মেডিকেল কলেজই তার লক্ষ্য। সেখানে উপস্থিত তার মা আশিকা ইমাম বলেন, ‘মেয়ের ফলে খুবই ভালো লাগছে। সব সময় টেককেয়ার করার চেষ্টা করেছি। কোচিংয়ে না দিয়ে বাসায় শিক্ষক রেখে পড়িয়েছি। যখন যা দরকার তাই দিয়েছি। এক মার্কের জন্য গোল্ডেন আসেনি। তবে এ নিয়ে মেয়ের কোনো আক্ষেপ নেই, আমাদেরও আক্ষেপ নেই।’
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, আইডিয়াল কলেজ থেকে ১ হাজার ১৫৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ হাজার ১৪৪ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬২ জন। পাসের হার ৯৮ দশমিক ৯৬। তবে গতবার পাস করেছিল ৯৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।
আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম সারাবাংলা’কে বলেন, ফলাফল ভালো হয়েছে। সারাদেশের তুলনায় আমাদের রেজাল্ট ভালো। তবে পাসের হার কিছুটা কমেছে। এর কারণ গতবার শিক্ষার্থী বেশি ছিল।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন অনলাইনেই ফলাফল পাওয়ার কারণে কলেজ প্রাঙ্গণে আগের মতো উৎসবের আমেজ নেই। এ ছাড়া মেয়েরা এমনিতেও কলেজে আসতে চায় না। যারা আশপাশে থাকে, তারাই এসেছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমএস/টিআর