প্রাইভেটে গিয়ে শিশু খুন, ধর্ষণের পর হত্যা নাকি শ্বাসরোধ?
২১ জুলাই ২০১৮ ১৩:৫৮
।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ‘দেড় মাস হয় ওই ম্যাডামের কাছে প্রাইভেট পড়ত আমার মেয়েটা। মাদ্রাসা থেকে এসেই দুপুরের খাবার খেয়ে ৩টার দিকে যেত ওই ম্যাডামের বাড়িতে। সেদিন প্রাইভেটে গিয়ে আমাদের মেয়ে আর জীবিত বাসায় ফেরেনি। এতটুকু বাচ্চা মেয়ে তাদের কী এমন ক্ষতি করেছে জানি না। আমাদের মনিটা বাসায় ফিরেছে লাশ হয়ে।’
১০ বছর বয়সী একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শুক্রবার (২০ জুলাই) যাত্রাবাড়ীর থানার সামনে বসে বিলাপ করছিলেন মা জান্নাতুল ফেরদৌসী। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পুলিশের হাতে এসেছে জানতে পেরে সকাল থেকেই থানার সামনে বসে ছিলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষায়।
জানতে চাইলে সারাবাংলা’র এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, যে শিক্ষিকার বাসায় তার মেয়ে প্রাইভেট পড়ত, সেই বাসাতেই গেল ২১ এপ্রিল মেয়ের মরদেহ পান তিনি। আর তার অভিযোগ, ধর্ষণের পরই হত্যা করা হয় তার সন্তানকে।
এ ঘটনার তিন মাস পর বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) শিশুটির মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এসেছে স্বজনদের হাতে। আর শুক্রবার (২০ জুলাই) রাতে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াজেদ আলী জানান, এ ঘটনায় ওই শিক্ষিকা ও তার স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শিশুটি স্থানীয় যাত্রাবাড়ীর বিছালীয়া মহিলা মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। গত ১ মার্চ থেকে স্থানীয় ফুলকলি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নুসরাত জাহান মনির বাসায় প্রাইভেট পড়তে শুরু করে সে। এর মাস দেড়েক পর, গত ২১ এপ্রিল সন্ধ্যায় ওই শিক্ষিকার বাসা থেকেই শিশুটির লাশ উদ্ধার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।
শিশুটির বাবা মো. শাহজাহান মিয়া সারাবাংলা’কে জানান, ওই ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে একটি অপমৃত্যুর মামলা নেয়। সেই সঙ্গে শিশুটির মরদেহ মিডফোর্ট হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। সে সময় পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানায়, শিশুটিকে ধর্ষণ কিংবা হত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। পরে ২৩ এপ্রিল শিশুটির মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে দাফন করা হয়।
শিশুটির মা সারাবাংলা’কে বলেন, ‘প্রাইভেট পড়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মেয়ে বাসায় চলে আসত। ওই দিন সন্ধ্যা হয়ে গেলেও মেয়ে বাসায় না ফেরায় ম্যাডামকে ফোন দেই। কিন্তু ম্যাডাম ফোনে বলে, মিম বাসায় চলে গেছে। আমি বলি, আমার মেয়ের নাম তো মিম না। এটা বলতেই ম্যাডাম কেঁদে ফোন কেটে দেন।’
তিনি বলেন, ‘পরে দ্রুত আমি তার (শিক্ষিকার) বাসায় গেলে দেখতে পাই, মেয়ে আমার ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে। কিন্তু মেয়ের লাশ দেখে আমার সন্দেহ হয়, আমার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। পরে মেয়েকে হত্যা করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে।’
প্রায় তিন মাস পর গত ১৯ জুলাই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে যাত্রাবাড়ী পুলিশ। তাতে ওই শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যার পর ঘরের ফ্যানের সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার আলামত পাওয়া গেছে বলে জানান শিশুটির বাবা। তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, লাশ উদ্ধারের সময় আমার মেয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল। আর ওই শিক্ষিকা বলেছেন, সে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু এতটুকু বাচ্চা একটা মেয়ে কিভাবে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলবে? আর যে রশিতে ঝুলছিল, তাতে তো কোনো গিঁটও ছিল না।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘এ ঘটনায় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আমাদের কাছে এসেছে। ময়নাতদন্তে শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী অভিযুক্ত নুসরাত জাহান ও মোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিএমপির ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম সারাবাংলা’কে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা বলা হয়েছে। সেখানে ধর্ষণের বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। তবে ফরেনসিক প্রতিবেদন প্রক্রিয়াধীন আছে। ওই প্রতিবেদন আসার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর/জেডএফ