Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেড় লাখ টন কয়লা ‘গায়েব’, কর্তৃপক্ষের দাবি- বাতাসে উড়ে গেছে


২১ জুলাই ২০১৮ ২২:১৬

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।

দিনাজপুর: বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলন করে রাখা ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক ( স্টোর) খালেদুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

একইসঙ্গে খনির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন)) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে সিরাজগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডে বদলি করা হয়েছে। পাশপাশি খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ করে পেট্রোবাংলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। আর তার এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খানকে।

কয়লা গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে খনি কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার পরিচালক (মাইন অপারেশন) কামরুজ্জামানকে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবুল কাশেম প্রধানিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৭ একর জমিতে কয়লাগুলো উৎপাদনের স্তূপ করে রাখা হয়। ২০০৫ সালের পর এ পর্যন্ত কখনো স্তূপে কয়লা ১ লাখ ৫০ হাজার টনের নিচে নামেনি। এছাড়া নতুন কয়লা উৎপাদন হওয়ায় সবসময় পরিমাপ করা যায় না কতটুকু কয়লা আছে।’

‘২০০৫ সাল থেকে অন্তত ৭/৮ জন এমডি এখান থেকে চলে গেছে। এতদিন বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। এখন এসেছে।’

কয়লা কম থাকায় খনির এমডি নিজেই বিষয়টি বোর্ড সভায় তুলেছিলেন বলে দাবি করেন আবুল কাশেম প্রধানিয়া।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন কয়লার মজুদ কমে যাওয়ায় বিষয়টি নজরে এসেছে। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়লা চেয়েছে। কিন্তু কয়লা দেওয়া যায়নি, ঘাটতি পড়েছে। বিশ্বের প্রতিটি কয়লাখনিতে ২-৫ শতাংশ সিস্টেম লস থাকে। সিস্টেম লসের কারণে কয়লা শুকিয়ে যায়, অটোমেটিম জ্বলে যায়, কয়লা বাতাসেও উড়ে যায়। বাতাসে উড়ে যাওয়ার কারণে কয়লা অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায় না।’

‘৫ শতাংশ সিস্টেম লস হলে ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা থেকে মাত্র ৭ দশমিক ১ টন কয়লা সিস্টেম লসে নষ্ট হওয়ার কথা’ জানালে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় হিসাবে কোনো গরমিল হয়েছে। সেখানে কয়লা নেই এটিই প্রকৃত সত্য কথা। ধারণা করা হয়েছিল, মাটির নিচে কয়লা আছে, কিন্তু মাটি খুঁড়েও কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না।’

নিজের বদলির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ীই আমাকে বদলি করা হয়েছে। বদলির সময় বলা হয়েছে, এখানে ঝামেলা চলছে। তুমি অন্য জায়গায় যাও। আমাকে ভালো জায়গাতেই বদলি করা হয়েছে।’

নথিপত্রের হিসাব অনুযায়ী, খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা যেখানে স্তূপ করে রাখা হয় সেখানে ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা মজুদ থাকার কথা ছিল। অথচ সেখানে এখন এক টন কয়লাও নেই। প্রতি টন কয়লার বর্তমান বাজার মূল্য ১৬ হাজার টাকা। সেই হিসাবে, ২২৭ কোটি টাকার কয়লার খোঁজ মিলছে না।

গত সোমবার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য আবু সাঈদ কয়লা খনি এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার পর কয়লা গায়েব হওয়ার কথা প্রথম সামনে আসে। কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বিঘ্নিত হয়েছে।

৩টি ইউনিটের ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৮শ’ থেকে একহাজার মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু কয়লার উৎপাদন না থাকায় বিপিডিবিকে চাহিদা অনুযায়ী কয়লা দিতে পারছে না বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি।

সারাবাংলা/একে


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর