সিলেটে ‘শরিক ভোটে’ মুখোমুখি বিএনপি-জামায়াত
২২ জুলাই ২০১৮ ১২:০৯
।। বিলকিস আক্তার সুমি,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
সিলেট :সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মুখোমুখি একই জোটের দুই দল বিএনপি ও জামায়াত। একক প্রার্থী নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ার কারণে দু’দলই নির্বাচনে প্রার্থী রেখেছে। তাই জোটের শরীক হয়েও নির্বাচনী প্রচারণায় একে অন্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে ছাড়ছেন না তারা।
জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচনে সতর্ক সিলেট বিএনপি। জামায়াত যেন ভোটে ভাগ বসাতে না পারে সেজন্য জোটের ভেতরে বিএনপির পক্ষ থেকে চলছে ‘কাড়াকাড়ি’। তবে মুখে কিছু না বললেও জামায়াত ২০ দলীয় জোটের বেশিরভাগ শরিক দলের সমর্থন পাচ্ছে। এরই মধ্যে অর্ধেকের বেশি দলের সিলেটের নেতাদের সঙ্গে ভালো ‘সর্ম্পক’ও গড়ে তুলেছে জামায়াত।
অন্যদিকে, জোটের ভোট ভাগাভাগিতে পড়ায় বেকায়দায় পড়া বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ছড়াতে চাইছেন।
জানা গেছে, দেশের ১২টি সিটির মধ্যে ১১টিতে ছাড় দিয়ে কেবল সিলেটে ২০ দলীয় জোটের সমর্থন চেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। এ জন্য তারা মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে সবার আগে মাঠে নামে। একইসঙ্গে তারা ২০ দলীয় জোটের সমর্থনও চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি সিলেটে জামায়াতকে ছাড় না দিয়ে আরিফুল হককে প্রার্থী ঘোষণা করে। এতে জামায়াত ক্ষুব্ধ হয়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) সিলেটে নির্বাচনী প্রচারণার সময় গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, জামায়াতের সঙ্গে সিলেটের একক প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে। স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানো বদরুজ্জামান সেলিমের মতো জামায়াতের প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে তারা কাজ করছেন। সিলেট বিএনপির নেতারাও একই সুরে বক্তব্য রাখছেন নির্বাচনী প্রচারণায়। ফলে জামায়াতের প্রার্থী নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, সিলেটে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী তিনি। কেন্দ্রীয়ভাবে ২০ দল তাকে প্রার্থী দিয়েছে। সুতরাং তার সঙ্গে ২০ দলের নেতারা রয়েছেন। সিলেটে ২০ দলীয় জোটের আর কোনো প্রার্থী নেই।
এমন পরিস্থিতিতে সিলেটে বেশ কয়েকবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠক আহ্বান করা হয়। কিন্তু ওই বৈঠকে জামায়াত ছাড়াও আরো ১০ দলের নেতারা উপস্থিতই হননি।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদও জানিয়েছেন, সবাইকে আমন্ত্রণ করা হলেও আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচনী কার্যালয় মীতা কমিউনিটি সেন্টারে ২০ দলের বৈঠকে শুধু মাত্র ৯ দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মো. ফখরুল ইসলাম সারাবাংলা’কে জানিয়েছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আলোচনা কিংবা সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। সেই সুযোগের ইতি ঘটেছে। এখন তারাও নির্বাচনে, আমরাও নির্বাচনে।’
‘জামায়াতে ইসলামী সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের জন্য কাজ করছে। আমাদের কর্মীরা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে ভোট চাচ্ছে,’ যোগ করেন এই নেতা।
স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলছেন, সিলেটে জামায়াতে ইসলামীর ভোট ব্যাংক দুর্বল নয়, আবার খুব শক্তিশালীও নয়। ২০১৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল জামায়াতে ইসলাম। জামায়াত নেতাদের দাবি, তাদের কাঁধে ভর দিয়েই ওই নির্বাচনে জিতেছিলেন আরিফুল। কিন্তু পরে জামায়াতকর্মীরা তাদের পরিশ্রমের প্রতিদান পাননি। বরং বিএনপির মেয়র আরিফুল নানাভাবে দল হিসেবে জামায়াতকে অবমুল্যায়ন করেছেন। আর এ কারণেই এবার জামায়াতে ইসলামী সিলেটে বিএনপির প্রার্থীকে ছাড় দিচ্ছে না।
জামায়াতের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এবার নাগরিক ফোরামের প্রার্থী হিসেবে সিলেট সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। জামায়াতের দাবি, সিলেটে সব প্রার্থীর চেয়ে তাদের প্রার্থী যোগ্য প্রার্থী। আর নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে তারা ভোটারের সাড়াও পাচ্ছেন।
সারাবাংলা/এসএমএন