একদিকে হামলা, অন্যদিকে ‘অপহরণ চেষ্টার’ অভিযোগ
২২ জুলাই ২০১৮ ২২:০৩
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আন্দোলনে নামে কোটা আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের ওপর হামলা ও আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি শেষে ফের হামলা ও অপহরণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বাড়াবাড়ির অভিযোগ পেয়ে ছাত্রলীগকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরপরই ফের দেশের ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের বিরুদ্ধে সামনে এসেছে এমন অভিযোগ।
রোববার (২২ জুলাই) নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশের সামনে অবস্থান করছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে এ কর্মসূচি সমাপ্তের পরপরই আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীকে ধাওয়া দিয়ে হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্মসূচি শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে অতর্কিতভাবে এক শিক্ষার্থীকে রাজু ভাস্কর্য থেকে ধাওয়া করে এক ছাত্রলীগ নেতা। ধাওয়া দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে নিয়ে গিয়ে কিল-ঘুষি দিতে শুরু করে। পেছন পেছন দৌঁড়ে গিয়ে সেই শিক্ষার্থীকে মুক্ত করা হয়। এ সময় হামলাকারী পালিয়ে যায়। হামলাকারীর সঙ্গে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাও ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষার্থীর উপর হামলাকারীর নাম হাসিবুল হোসেন শান্ত। তিনি জিয়া হল ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপসম্পাদক। এ সময় শান্তর সঙ্গে ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিদার মো নিজামুল হকসহ চার-পাঁচজনকে থাকতে দেখা গেছে।
হামলার ঠিক একই সময়ে ক্যাম্পাসের ভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষ করে ফিরে আসার সময় চার আন্দোলনকারীকে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার দৃশ্য সিসিটিভির ফুটেজেও দেখা গেছে।
জানা যায়, আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের চার যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন, রাতুল সরকার, বিনী ইয়ামিন ও নিয়াজি শাহবাগ হয়ে সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় এলিফেন্ট রোডের দিকে যাচ্ছিলেন।
ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসা চারজনের একজন আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাতুল ইসলাম বলেন, সে সময় দুটি মোটর বাইকে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান উজ্জ্বল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা বাইক নিয়ে এলিফ্যান্ট রোডের কাছে এসে তাদের সিএনজি আটকে দেয়।
‘সে সময় আমরা দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও যুগ্ম সম্পাদক বিন ইয়ামিন ও সোহরাব হাসানকে তারা তুলে নিয়ে নিউ মার্কেটের দিকে চলে যায়। এরপর তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া না গেলেও, পরে তাদের মারধর করে ছেড়ে দেয় ছাত্রলীগ।’ জানান রাতুল ইসলাম।
মারধরের পরে চারজনের মধ্যে নিয়াজীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে আমির হামজা তাদের তুলে নেওয়ার ঘটনা অস্বীকার করেন। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্দোলনকারীকে হামলার কথাও অস্বীকার করে ছাত্রলীগ।
এদিকে এমন ঘটনাকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই আন্দোলনকারী জানান, ‘অহিংসভাবেই আমরা কর্মসূচি পালন করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই এভাবে দুই জায়গায় মার্ক করে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ছাড়া কিছু নয়। কর্মসূচির শেষ হওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের চারপাশে অবস্থান করছিল। তারা ক্যাম্পাসে আন্দোলন করতে দিতে চায় না। দমিয়ে রাখতে চায়।’
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘ছাত্রলীগের কেউ তাদের ধারে কাছে যায়নি। এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা-বানোয়াট। তাদের ওপর কেউ কিছু করেনি। কেনো করেনি, এ জন্যই তারা এগুলো করছে। মূলত আন্দোলন জমানোর জন্যই তারা এমন করছে।’
সারাবাংলা/জেএইচ/এমআই