Thursday 16 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হলি আর্টিজান মামলা: ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট


২৩ জুলাই ২০১৮ ১৩:৩২ | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ১৬:০৭

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় ২১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট জমা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন ‍পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

সোমবার (২৩ জুলাই) দুপুর পৌনে ১টার দিকে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম।

ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, হামলায় মোট ২১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চার্জশিটে ওই ২১ জনের নামই দেওয়া হয়েছে। তবে ২১ জনের মধ্যে ১৩ জনই বিভিন্ন জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছে। তাই ওই ১৩ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি আট জনের মধ্যে ছয় জন কারাগারে আছে, বাকি দু’জন পলাতক।

মনিরুল ইসলাম বলেন, হামলার ঘটনা তদন্তের সময় অভিযুক্ত সবার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। আমরা আশা করছি, তাদের শাস্তি নিশ্চিত হবে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, হামলার ঘটনায় চার্জশিট তৈরির আগে মোট ২১১ জন লোকের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৯ জন প্রত্যক্ষদর্শী, যাদের মধ্যে পুলিশও ছিলেন। সাক্ষ্য নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন হলি আর্টিজানের ভেতরে ছিলেন এবং বাকিরা কোনো না কোনোভাবে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন।

এর আগে, গত ৩০ জুন মনিরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিসাপেক্ষে আগামী ১০ দিনের মধ্যে আদালতে হলি আর্টিজান মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ২১ জঙ্গির মধ্যে পাঁচ জঙ্গি সরাসরি হলি আর্টিজানে কমান্ডো অভিযানে মারা গিয়েছে। তারা হলো— রোহান ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামি মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। নিহত বাকি আট জন হলো— তামিম চৌধুরী, সারোয়ার জাহান, মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদ, বাশারুজ্জামান চকলেট, মিজান ও আবু রায়হান।

বিজ্ঞাপন

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, হাসনাত করিমসহ সাত জন কারাগারে আছে। তবে ওই ঘটনায় হাসনাত করিমের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে এই সাত জনের মধ্যে চার্জশিটে ছয় জনের নাম রাখা হয়েছে। তারা হলো— সোহেল মাহফুজ, বড় মিজান, রিগ্যান, রাশেদুল ইসলাম র‌্যাস, হাদিসুর রহমান সাগর ও রাজীব গান্ধী। আর পলাতক দুই জঙ্গি হলো— শরিফুল ইসলাম খালিদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ৯ ইতালীয়, ৭ জাপানি, এক ভারতীয় ও দুই বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হন। রাতভর সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে। পরে সেখান থেকে পাঁচ জঙ্গির সাথে রেস্তোরাঁটির প্রধান শেফ সাইফুল ইসলামের লাশ উদ্ধার হয়। আর সাইফুলের সহকারী জাকির হোসেন শাওন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

একই ঘটনায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের ছোঁড়া গ্রেনেডের আঘাতে রেস্তোরাঁর বাইরে নিহত হন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন খান।

পাঁচ জঙ্গিসহ শেফ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী শেফ শাওনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে দীর্ঘদিন পরে থাকার পর বেওয়ারিশ ঘোষণা করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হলি আর্টিজান হামলায় জড়িতদের মধ্যে হামলার পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযানে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গি রোহান, মোবাশ্বের, নিবরাস, উজ্জ্বল ও পায়েল। এই হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় সিটিটিসি’র জঙ্গিবিরোধী অভিযানে দুই সহযোগীসহ নিহত হয়। হামলার আরেক পরিকল্পনাকারী সরোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর আশুলিয়ায় র‌্যাবের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিজ বাড়ি থেকে পালাতে গিয়ে পাঁচ তলা থেকে পড়ে নিহত হয়। এ ছাড়া মেজর জাহিদুল ইসলাম ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে সিটিটিসি’র জঙ্গিবিরোধী অভিযানে; রায়হান করিব ওরফে তারেক ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে; তানভীর কাদেরী ওরফে জামসেদ ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুর এলাকায় সিটিটিসির অভিযানে; নূরুল ইসলাম মারজান ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় সিটিটিসির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এবং বাশারুজ্জামান চকোলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সিটিটিসির জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/এমআই/টিআর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর