৩ কারণে হলি আর্টিজানে হামলা
২৩ জুলাই ২০১৮ ১৮:০০
।।সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পেছনে বেশকিছু কারণ তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এসব কারণের মধ্যে মূল কয়েকটি কারণ হলো— বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানো, অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ এবং সরকারকে উৎখাত করা।
সোমবার (২৩ জুলাই) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, তদন্তে উঠে এসেছে, হলি আর্টিজানে হামলার ছয় মাস আগে জঙ্গিরা পরিকল্পনা করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশকে অস্থিতিশীল করা; বাংলাদেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র বানানো; পাশাপাশি সরকারকে কোণঠাসা করে দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে সরকারকে চাপে ফেলা; বিনিয়োগকারী-রফতানিকারকরা এবং উন্নয়নকাজে সম্পৃক্ত বিদেশি কনসালট্যান্টরা যেন এই দেশে না আসে। অর্থাৎ দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও সরকারকে বিব্রত করা। তারা মনে করেছিল, আসল জঙ্গিদের ধরতে না পেরে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন করা হবে। এতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করবে। তারা এই ক্ষোভ কাজে লাগাতে চেয়েছিল।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, তদন্তে আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে। তা হলো— আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কে যারা আছে, এই হামলার মাধ্যমে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। সেটা হলে বিশ্বব্যাপী যারা বড় বড় জঙ্গি সংগঠন আছে, তারা অস্ত্রসহ আর্থিক সহায়তা করবে। যাদের অস্ত্র আছে, অর্থ আছে, টেকনোলজি আছে, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাও একটা বড় উদ্দেশ্য ছিল। তারা চিন্তা করেছিল, বেশিসংখ্যক বিদেশি হত্যা করতে পারলে দেশে জাতীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিপুল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মনোযোগও পাওয়া যাবে। এ জন্যই হামলার জন্য তারা হলি আর্টিজানকে বেছে নিয়েছিল।
তিনি বলেন, জঙ্গিরা এ ঘটনা ঘটানোর আগে আরও কয়েকটি জায়গায় রেকি করেছিল। কিন্তু তাদের রেকিতে বেরিয়ে এসেছিল, হলি আর্টিজানে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিল না। হামলার জন্য এই জায়গাটি সুবিধাজনক ছিল। এই এলাকায় হামলা করে সহজেই বের হয়ে যাওয়া যাবে বলেও ধারণা করেছিল তারা।
মনিরুল ইসলাম বলেন, বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে এই হামলার জন্য মনোনীতদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক অপারেশনে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পাঠায় জঙ্গিরা। পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাকগ্রাউন্ডের যে দু’জন—শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল— তারা যেহেতু এর আগে অনেকগুলো ঘটনায় জড়িত ছিল, তাই তাদের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞ তিন জনকে সেট করে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, যারা কর্মচারী ছিল তাদের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সাক্ষীরা ঠিক সময়ে না আসার শঙ্কা থেকে আগে নেওয়া জবানবন্দি রেকর্ড হিসেবে আদালতের অনুমতি নিয়ে পাঠানো হয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য বিভিন্ন আলামত আমরা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিলাম, সেই রিপোর্টও এসেছে। সেগুলোও আমরা আদালতে পাঠিয়েছি।
মামলার চার্জশিট দিতে দেরি হওয়ার কারণ তুলে ধরে মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিল তারা ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিল। তাই তদন্তে বেশকিছুটা সময় লেগেছে। আবার জীবিতদের ধরতে বিভিন্ন অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সেই অভিযানেও অনেকে মারা যায়। এ কারণেও একটু বেশি সময় লাগে।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার এই ঘটনায় নিহত দেশি-বিদেশি নাগরিক ও পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করতে না পারাটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা ছিল বলে জানান সিটিটিসি’র এই প্রধান। তিনি আরও বলেন, ‘নব্য জেএমবির ছোট কিংবা বড়— কোনো নেতাকেই আমরা গ্রেফতার করতে পারিনি। তাই তাদের অন্য আরও কোনো বড় উদ্দেশ্য ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব হয়নি। জীবিত কাউকে ধরতে পারলে হয়তো আরও বেশি তথ্য পাওয়া সম্ভব ছিল।’
তদন্তে আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি নেটওয়ার্ক, আইএস, হিযবুত তাহরীর বা কোনো বিদেশি সংস্থার সাথে নব্য জেএমবির কারও সম্পর্ক খুঁজে পাননি জানিয়ে পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘তবে তামিম চৌধুরী বা তানভীর কাদেরীর কাউকে গ্রেফতার করতে পারলে হয়তো কোনো তথ্য বের হয়ে আসত। তামিম চৌধুরীর সঙ্গেই একমাত্র বিদেশি নেটওয়ার্কের যোগসাজশ থাকলেও থাকতে পারত। কিন্তু তাকে জীবিত ধরতে না পারার কারণেই এ বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।’
সারাবাংলা/ইউজে/জেএএম/টিআর