Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কটূক্তির অভিযোগ, ব্যাখ্যা দিলেন অধ্যাপক আকমল হোসেন


২৪ জুলাই ২০১৮ ১৮:০৯

।। ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাবি: নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের সমাবেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে কটূক্তিমূলক বক্তব্যের অভিযোগ তুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

এর প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলায় মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে অত্যন্ত অপ্রাসঙ্গিকভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অধ্যাপক আকমল হোসেন (অবসরপ্রাপ্ত) বলেছেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী, তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তার পিতা … তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।’

আমরা বিস্মিত হই এই ভেবে যে, ‘এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য সত্ত্বেও উক্ত সমাবেশের আয়োজকরা তার এ-বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ তো করেনইনি বরং বাহবা দিয়েছেন। ঘটনা পরম্পরায় প্রতীয়মান হয় যে, আকমল হোসেনের এই বক্তব্য তার একক বক্তব্য নয়, এটি সেই অতি প্রতিক্রিয়াশীলদের অপভাবনার বহিঃপ্রকাশ; যারা মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বারংবার বিতর্ক তৈরির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে আঘাত করে তারা শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধকেই নয়, বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপরও আঘাত করেছেন।’

‘আমরা মনে করি তার এই ধরনের বক্তব্য ইতিহাস বিকৃতির অপপ্রয়াস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি, সংবিধানবিরোধী এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এসব মিথ্যা ও দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই চক্র কোটা আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল করার হীন ও গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন’ বলেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তরুণ-বুদ্ধিদীপ্ত শিক্ষার্থীদের আবেগ ব্যবহার করে মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির জনক এবং প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করার এ অশুভ ও অপরাজনৈতিক প্রয়াসের আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একইসঙ্গে তার এই বক্তব্য অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারপূর্বক জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই।

যা বললেন আকমল হোসেন: কোটা সংস্কার আন্দোলনের নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্য গত ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের দ্বারা আয়োজিত এক সমাবেশে দেয়া আমার বক্তব্য নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে আমার মনে হয়।

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক অংশের সভায় দেওয়া বক্তব্য থেকে আমি বুঝতে পারছি যে আমার বক্তব্যকে সঠিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে বিচার করা হচ্ছে না। উপরন্তু, আমার বক্তব্যকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ২৫ জুলাই বুধবার পৃথক একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেছে, যেখানে অভিযোগ করা হচ্ছে আমি ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে কটূক্তিমূলক’ মন্তব্য করেছি।

খণ্ডিতভাবে উপস্থাপিত হওয়ার কারণে আমার বক্তব্যকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি আমার বক্তব্যের পূর্ণাঙ্গ দিক ও প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরছি।

আমার বক্তব্যে আমার বিভাগীয় সাবেক ছাত্র ও পরবর্তী সময়ে সহকর্মী মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হকের ওপর ১৬ জুলাই শহীদ মিনারে সংঘটিত হেনস্তার (যখন তানজীমকে অত্যন্ত অশিষ্টভাবে আঙুল তুলে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে তিনি কেন মুক্তিযুদ্ধে যাননি) প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন করেছিলাম যে, ‘মুক্তিযুদ্ধে যোগদান কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মাপকাঠি হতে পারে কি না?’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে যেয়ে আমি বলেছিলাম, ‘মুক্তিযুদ্ধ একটি মহান ঘটনা আমাদের জাতির জীবনে। এটা নিয়ে যেভাবে অবস্থান নে য়া হয়, বক্তব্য দেওয়া হয় তাতে মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা হয়। আমার প্রশ্ন আমাদের প্রধানমন্ত্রী কি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন? তার পিতা যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হয়েছিল তিনি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তাহলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে যদি বিচার করা হয় কে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে তা হলে তা হবে অত্যন্ত একটি নেতিবাচক ধারণা।’

লক্ষ করার বিষয় কোনো কোনো টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার বক্তব্য থেকে খণ্ডিতভাবে শুধুমাত্র দু’টি লাইন তুলে দেওয়া হয় নিজস্ব ভাষায়। আমার বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার কোনো অভিপ্রায় ছিল না। বঙ্গবন্ধু তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বাঙালি জাতির স্বাধিকারের প্রশ্নে আপসহীন সংগ্রাম করেছিলেন। ছয় দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধিকারের প্রশ্নটি বেগবান করার পিছনে তার অবদান অনস্বীকার্য।

আমার ছাত্র-ছাত্রীরা জানেন যে আমি যখন তাদের ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস’ কোর্সটি পড়িয়েছি সে সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটটি এ ভাবে তুলে ধরেছি। এবং বলেছি যে তিনি স্বশরীরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি কিন্তু তার নামেই সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং আমার সেদিনের বক্তব্যে তার সশরীরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি উপর্যুক্ত পরিপ্রেক্ষিতে বোঝা জরুরি।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও তার রাজনীতিক জীবনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলে যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার থাকবে না জাতীয় যে বক্তব্য ছাত্রলীগের কর্মীদের কারো কারো মুখে প্রকাশ পেয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করতে আমি আমার বক্তব্যবের এ অংশে গুরুত্বারোপ করেছিলাম।

আমি উল্লেখ করতে চাই, যে আমি আমার দীর্ঘ ৩৭ বছর শিক্ষকতা জীবনে কোনো রক্ষণশীল চিন্তাধারাকে কখনই বহন করিনি বা প্রশ্রয় দেইনি। বরং শিক্ষকদের প্রগতিশীল অংশের সঙ্গে বরাবরই আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম। অতএব আমার বক্তব্যকে যারা ভুল বুঝেছেন এবং ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন আশা করি তাদের কাছে আমার বক্তব্যকে পরিস্কার করতে পেরেছি। আমি আশা করব এই ব্যাখ্যার পরে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।

সারাবাংলা/একে


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

আগস্টে কমেছে মূল্যস্ফীতি
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৭

আইভরি কোস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৪০

সম্পর্কিত খবর