Sunday 12 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাজিরা দিয়েই বেতন, ৯ বছর পর জারিজুরি ফাঁস


২৫ জুলাই ২০১৮ ১০:৩৩ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ১২:০২

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

এ যেন নচিকেতা’র ‘সরকারি কর্মচারী’ গানের সেই চরিত্র। অফিসে কী করলেন কী করলেন না, তার কোনো হিসাব নেই; কেবল হাজিরা দিয়েই মাস গেলে ঠিকঠাকমতো পকেটে সরকারি কোষাগারের মোটা অঙ্কের বেতন। কিন্তু ওই যে বলে, চোরের ১০ দিন, সাধুর একদিন। চার্লস রেসিও অবশ্য ধরা পড়তে আরেকটু বেশিই সময় নিলেন, ৯ বছর। শেষ পর্যন্ত শেষ হলো তার সুখের সেই সময়, বরখাস্ত হয়েছেন সুখের সেই চাকরি থেকে।

নচিকেতা মূলত ভারতীয় ‘সরকারি কর্মচারী’দের নিয়ে তার গান লিখলেও চার্লস রেসিও’র বাড়ি স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায়। সরকারি একটি সংগ্রহশালার পরিচালক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। জবাবদিহিতা না থাকার সুযোগ লুফে নিয়ে ৯ বছর ধরে কেবল হাজিরা দিয়েই তিনি বছরে তুলে নিতেন ৫০ হাজার ইউরো বেতন!

সহকর্মীরা বলছে, চার্লস ফন্দি করে প্রতিদিন ঠিক ঠিক সকাল সাড়ে ৭টায় এসে হাজির হতেন অফিসে। এরপর খাতায় নাম তুলেই বেরিয়ে যেতেন। এরপর আবার অফিসের শেষের সময় বিকাল ৪টার একটু আগে আগে ফিরে আসতেন। তারপর আর সবার সঙ্গে তিনিও বেরিয়ে যেতেন সময়মতো। অর্থাৎ, কাগজে-কলমে চার্লসের অফিসে আসা-যাওয়ার সময়ে কোনোই গোলমাল ছিল না!

চার্লস নিজে অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। স্প্যানিশ একটি টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, ‘আমি কুকুরের মতো অফিসের কাজ করেছি। আর এখন অন্যরা আমার পরিশ্রমে ভাগ বসাচ্ছে।’

তার এমন বক্তব্য অবশ্য হালে পানি পায়নি। স্পেনেরই একটি আদালত তার এমন বক্তব্য প্রত্যাখান করে বলেছেন, অফিসে তিনি কী কাজ করেছেন, তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। চার্লসের দায়িত্ব পালনে কোনো সদিচ্ছা ছিল না বলেও আদালত নিন্দা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এত কিছুর পরও অবশ্য বার্ষিক ৫০ হাজার ইউরোর চাকরিতে বহাল রাখার সুযোগ মিলেছিল চার্লসের! আদালত বলেছিলেন, কাজ না করেই ৯ বছরে যে বেতন পকেটে পুড়েছেন চার্লস, তা ফেরত দিলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে না। তাতে অবশ্য রাজি হননি চার্লস। চাকরিতে ফিরে গিয়ে কাজ করার চেয়ে বরং বসে বসে কামানো টাকা পকেটে রাখার সুযোগটাই বেছে নিয়েছেন তিনি।

অবশ্য চার্লসের দোষ আর কী, সরকারি একজন কৌঁসুলীই মন্তব্য করেছিলেন, ৯ বছর ধরে বসে বসে বেতন নেওয়াটা কোনো গুরুতর অপরাধ নয়! এর সুযোগ যে চার্লসের মতো অনেকেই নেবেন, তাতে অবাক হওয়ার কী আছে। আর সে কারণেই ভ্যালেন্সিয়া রাজ্য সরকারকেও ভর্ৎসনা করেছেন আদালত।

মজার বিষয় হলো, এত বড় ধাক্কা খেয়েও চার্লসের কূটবুদ্ধি থেমে যায়নি। মিথ্যা পরিচয়ে নিজের সাফাই গাইতে তিনি একটি চিত্রকর্ম প্রদর্শনী আয়োজনের চেষ্টা করেন। প্রদর্শনীটির নাম দিয়েছিলেন, ‘ভ্যালেন্সিয়ার জন্য ভালোবাসা: অকাজের মানুষটির কিছু কাজ।’ তবে সেখানেও ধরা খেয়ে যান চার্লস রেসিও। তার প্রদর্শনীটি বাতিল করা হয়।

চার্লসের এমন সব উদ্ভট কর্মকাণ্ডে আর মাথা ঠিক রাখতে পারেনি ভ্যালেন্সিয়ার সাধরণ মানুষ। তাকে ধুইয়ে দিচ্ছেন সবাই অনলাইনে-অফলাইনে। স্থানীয় পত্রিকাগুলো পর্যন্ত চার্লস রেসিওকে আধুনিক ভ্যালেন্সিয়ার ‘সবচেয়ে ভণ্ড’ মানুষের তকমা দিয়েছে।

সারাবাংলা/এনএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর