ডিসি হিল খুলে দিন, প্রশাসনকে সংস্কৃতিমন্ত্রী
২৫ জুলাই ২০১৮ ২২:৩৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ডিসি হিলের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অবিলম্বে সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে ডিসি হিল উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশাসন ও সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভার একপর্যায়ে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন মন্ত্রীকে জানান, শিশু একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমি ছাড়া নগরীতে কোনো উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান হচ্ছে না। ডিসি হিলে অনুষ্ঠান বন্ধ আছে।
মন্ত্রী বলেন, ডিসি হিলে বহুবছর ধরে অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। সেই অনুমতি চট্টগ্রামের ডিসিই একসময় দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের মতো একটি শহরে বহুদিন ধরে উন্মুক্ত জায়গায় অনুষ্ঠান করতে পারছে না মানুষ। এটি আমাদের কাছে খুবই বিস্ময়কর।
ডিসি হিল বন্ধের নির্দেশদাতা জেলা প্রশাসনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমাদের প্রশাসন তো বাইরের কেউ নন। এটি তো বিদেশি বা পাকিস্তানি প্রশাসন নয়। বাংলাদেশের প্রশাসন হয়েও যদি দেশের সংস্কৃতি নিয়ে কথা না বলে, তাহলে তারা কার জন্য কথা বলবে?
এ সময় জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা ডিসি হিলে অনুষ্ঠান হচ্ছে বলে মন্ত্রীকে জানালে সংস্কৃতিকর্মী ও প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান তার প্রতিবাদ করেন।
রাশেদ হাসান ওই কর্মকর্তার প্রতি বলেন, ‘আপনি অসত্য তথ্য দিচ্ছেন। ডিসি হিলে কোনো অনুষ্ঠান আপনারা করতে দিচ্ছেন না। আপনারা অনুষ্ঠান বন্ধের জন্য যেসব যুক্তি দিচ্ছেন সেগুলো হাস্যকর যুক্তি। আপনারা সময় নির্ধারণ করে দিতে পারে যে কতক্ষণ অনুষ্ঠান করা যাবে। কিন্তু আপনারা অনুষ্ঠানই বন্ধ করে দিলেন। আসলে আপনারা আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। আপনার বাসার গণ্ডিতে কেউ যেন ঢুকতে না পারে সেজন্য আপনারা অনুষ্ঠান বন্ধ করেছেন। ডিসি হিল যদি আমলার বাসভবন হয়, তাহলে আমরাও বলতে পারি এটা সংস্কৃতির পীঠস্থান। আমলারা এটা দখল করে রাখতে পারেন না।’
পরে মন্ত্রী আবার বলেন, ডিসি হিলে অনুষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে আমরা সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে নিন্দা প্রস্তাব নিয়েছি। ডিসির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসনমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। কারণ এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা তিনি করতে পারেন না।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমাদের ডিসি সাহেবরা যখন বক্তব্য দেন তারা কিন্তু জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। এটিকে দমন করার জন্য সংস্কৃতির কথা তুলে ধরেন। কিন্তু যখন কাজের ক্ষেত্রে আসেন, তখন তারা কত নিয়ম তৈরি করেন!
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনারা প্রশাসনের প্রতিনিধি ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসুন। কমিটি গঠন করুন। আপনারা সিদ্ধান্ত নেন, কমিটিতে কারা কারা থাকবেন। নীতিমালা তৈরি করে ডিসি হিল খুলে দিন।
সভায় একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেনসহ চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মী ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছিলেন।
এর আগে, গত বছরের নভেম্বরে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ডিসি হিলে তিনটি অনুষ্ঠান বাদে সব অনুষ্ঠান বন্ধের আহ্বান জানান। এরপর জেলা প্রশাসন পহেলা বৈশাখ এবং রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী ছাড়া বাকি সব অনুষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
এর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ সংস্কৃতিকর্মীরা গত এপ্রিলে ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের আয়োজন স্থগিতের ঘোষণা দেন। তখন জেলা প্রশাসক নিজে সংস্কৃতিকর্মীদের অনুরোধ করে পহেলা বৈশাখের আয়োজন করেন। ডিসি হিলে অনুষ্ঠান করতে দেওয়ার অঙ্গীকারও করেছিলেন জেলা প্রশাসক। তবে এরপর থেকে আবারও অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর