আবারও তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের
২৬ জুলাই ২০১৮ ০৯:০৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
শেষ ওভারে হেরে যাওয়ার দুঃস্বপ্নটা আর কতকাল তাড়া করে বেড়াবে বাংলাদেশকে?
সেই ২০১২ মিরপুর থেকে শুরু। এরপর বেঙ্গালুরু, এবার গায়ানা। ৭ বলে ৮ রান নিতে পারল না বাংলাদেশ, ৬ উইকেট হাতে নিয়ে। ক্রিজে মুশফিকুর রহিম থাকার পরও বাংলাদেশ ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হেরে গেল ৩ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ রুদ্ধশ্বাস এক জয়ে সিরিজে সমতা নিয়ে এলো,সেন্ট কিটসে শেষ ওয়ানডেটাই ঠিক করে দেবে বিজয়ী।
অথচ ৪৯তক্ম ওভারের পঞ্চম বলেও সবকিছু ছিল ঠিকঠাক। ৭ বলে ৮ রান দরকার, ক্রিজে সাব্বির। কিন্তু কিমু পলের ফুলটস মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন । তারপরও মুশফিক ছিলেন শেষ ওভারের স্ট্রাইকে। হোল্ডারের আগের ওভারেও নিয়েছিলেন ১৩ রান। এবার পেলেন ফুলটস, কিন্তু মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলেন ডিপ মিডউইকেটে। ৬৭ বলে ৬৮ রান করে ফিরে গেলেন। পরের দুই বলে মোসাদ্দেক কোনো রান নিতে পারলেন না,এরপর নিলেন দুই রান। শেষ বলে স্ট্রাইকে মাশরাফি, জয়ের জন্য দরকার ৫ রান। কিন্তু মাশরাফি নিতে পারলেন ১ রান, মাথা ঠাণ্ডা রেখে হোল্ডার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এনে দিলেন দুর্দান্ত একটা জয়।
বাংলাদেশ যেভাবে শুরু করেছিল, তাতে মনে হচ্ছিল জয়টা অনেক আগেই পেয়ে যাবে। এনামুল হক প্রথম থেকেই আগ্রাসী, শুরুতেই মারলেন দুই ছয়। কিন্তু ৯ বলে ২৩ রান করে ডাউন দ্য উইকেটে এগিয়ে এসে উইকেট উপহার দিয়ে এলেন। বাংলাদেশের রান উঠে যাচ্ছিল তরতর করে,পেল ওয়ানডেতে নিজেদের দ্রুততম ফিফটি। সাকিব-তামিম দারুণ শুরুর পরও খোলসে ঢুকে গেলেন। একের পর এক ডট বলে চাপটা বেড়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই চাপ থেকেই সম্ভবত তামিম ডাউন দ্য উইকেটে এসে স্টাম্পড হয়ে গেলেন বিশুর বলে। ৮৫ বলে ৫৪ রান করেছেন তামিম, এর মধ্যে ৫৪টি ডট। সাকিবও ৫৬ রান করে অলস এক শটে উইকেট দিয়ে এলেন নার্সের বলে।
মুশফিক অবশ্য নায়ক হবেন বলেই মনে হচ্ছিল। শুরুটাও করেছিলেন দারুণ, জোসেফকে উড়িয়ে ছয়ও মেরেছিলেন। মধ্যে একবার আউটও হয়েছিলেন, রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। তবে চারটা আর পাননি। কে জানে, সেটা পেলে ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেই যায় আগে!
বাংলাদেশের শুরুটাও হয়েছিল আশা জাগানিয়া। ক্রিস গেইল ও এভিন লুইস আরও একবার পারেননি ঝড় তুলেননি। লুইসকে ফিরিয়ে প্রহম ব্রেক থ্রু দিয়েছেন মাশরাফি। তবে গেইল যখনই বিপজ্জনক হতে যাচ্ছেন, ২৯ রান করার পর ফিরে গেলেন মেহেদী হাসান মিরাজের বলে।
তবে শিমরন হেটমায়ার নামের একজন ঠিক করে রেখেছিলে, দিনটা নিজের করে নেবেন। ১২৫ রানের ম্যাচ জেতানো সেই ইনিংসও বলতে গেলে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে। রোভমান পাওয়েলকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে শুরুতে যোগ করলেন ১০৩ রান। পাওয়েল খুব একটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না, ৬৭ বলে ৪৪ রান করে শেষ পর্যন্ত বোল্ড হলেন রুবেলের বলে। পাওয়েলের আউটের পরেই ফিরতে পারতেন হেটমায়ার, কিন্তু রুবেলের বলে সাকিব ক্যাচটা তো ধরতে পারেননি, উলটো বানিয়ে দিয়েছেন ছয়।
তবে কারও সাহায্য ছাড়াই হেটমায়ার একাই টেনে নিয়ে গেছেন দলকে। লোয়ার অর্ডারে কেউ দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি, তবে হেটমায়ার একাই মারছিলেন। ৮৪ বলে পেয়েছেন সেঞ্চুরি। তারপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২৭১পর্যন্ত যায় না। সেটা গেল রুবেল হোসেনের আরও একবার ডেথ ওভারে এলোমেলো হয়ে যাওয়ায়। ৪৯তম ওভারে এসে রুবেলকে তিন বলের মধ্যে দুইটি ছয় মারলেন হেটমায়ার। ওই ওভারে শেষ পর্যন্ত এলো ২২ রান, সেটাই হয়তো শেষ পর্যন্ত গড়ে দিল পার্থক্য।
বাংলাদেশ একাদশ
তামিম ইকবাল, এনামুল হক, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ,মাশরাফি বিন মুর্তজা, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ
ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, শেই হোপ, জ্যাসন মোহাম্মেদ, শিমরন হেটমায়ার, জ্যাসন হোল্ডার, রোভমান পাওয়েল, দেবেন্দ্র বিশু, কিমো পল,অ্যাশলি নার্স, আলজারি জোসেফ
সারাবাংলা/ এএম