সিটি নির্বাচন: আয়ে এগিয়ে লিটন, সম্পদে বুলবুল
২৬ জুলাই ২০১৮ ১১:৩৪
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা : দরজায় কড়া নাড়ছে সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল— এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তিন সিটিতে মেয়র পদে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয় জন।
এই ছয় প্রার্থীর মধ্যে বার্ষিক আয় বৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছেন রাজশাহী সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। আর সম্পদের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন একই সিটির বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। অন্যদিকে, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে কম বার্ষিক আয় ও সম্পদ সিলেটের আরিফুর হক চৌধুরীর। প্রার্থীদের হলফনামায় উল্লেখ করা তথ্য পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রার্থীদের তথ্যে পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে অর্থাৎ ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজশাহী সিটির মেয়র প্রার্থী লিটনের আয় বেড়েছে ৩ হাজার ১১০ শতাংশ। একই সময়ে তার সম্পদ বেড়েছে ২৩০ শতাংশেরও বেশি। লিটনের চেয়ে আয় বৃদ্ধিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সম্পদ বৃদ্ধিতে এগিয়ে আছেন। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বুলবুলের আয় বেড়েছে ১ হাজার ৫১৮ শতাংশ এবং সম্পদ বেড়েছে ৮৭৮ শতাংশ।
তবে আয় ও সম্পদ বৃদ্ধিতে রাজশাহী সিটির মেয়র প্রার্থীর তুলনায় পিছিয়ে রয়েছেন বরিশাল ও সিলেট সিটির মেয়র প্রার্থীরা। প্রার্থীদের হলফ নামায় দাখিল করা তথ্যে বিশ্লেষণ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) অনুসন্ধানে এসব বের হয়ে এসেছে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে লিটনের বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, ২০১৩ সালে তা বেড়ে হয় ৫৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে হয়েছে ৭৮ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের ব্যবধানে লিটনের আয় বেড়েছে ৩ হাজার ১১০ শতাংশ। এছাড়াও ২০০৮ সালে লিটন ও তার ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে তা ২৩০ শতাংশ বেঁড়ে দাড়িয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ টাকায়।
অন্যদিকে ২০০৮ সালে বুলবুল কোন বার্ষিক আয় দেখাননি। ২০১৩ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে এসে তা ১ হাজার ৫১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৩১ লাখ ৭ হাজার টাকা। আর, ২০০৮ সালে বুলবুল ও তার ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৬ লাখ ১২ হাজার টাকা, ২০১৮ সালে হয়েছে ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে সম্পদ বেড়েছে ৮৭৮ শতাংশ।
এদিকে বরিশাল ও সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চার মেয়র প্রার্থীর বার্ষিক আয় ও সম্পদের পরিমাণ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থীর তুলনায় কিছুটা কম। বিএনপির বরিশাল সিটির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার ও তার ওপর নির্ভরশীলদের ২০০৮ সালে বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৬ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে এসে তা ৭০৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
আর ২০০৮ সালে সরওয়ার ও তার ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদ ছিল ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। বর্তমানে তার পরিমাণ ৬ কোটি ২৮ লাখ ১২ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে সরওয়ারের ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদেক আবদুল্লাহ বার্ষিক আয়ের হিসাব পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে সিলেট সিটিতে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দীন আহমেদ কামরান ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে তা ৪৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। কামরান ও তার ওপর নির্ভরশীলদের ২০০৮ সালে সম্পদের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ২২ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ২৫৮ শতাংশ বেড়ে দাড়িয়েছে ৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
সিলেটে বিএনপির প্রার্থী আরিফুর হক চৌধুরী ও তার ওপর নির্ভরশীলদের ২০১৩ সালে বার্ষিক আয় ছিল ১০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে তা ৪৮ শতাংশ বেড়ে দাড়িয়েছে ১৫ লাখ ৬৪ হাজারটাকা। আর ২০১৩ সালে আরিফুর হক ও তার ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদ ছিল ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বর্তমান সময়ে তা ১১ শতাংশ কমে হয়েছে ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান সারাবাংলাকে বলেন, সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় দাখিল করা সম্পদের চেয়ে তাদের প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ আরো বহু গুণ বেশি হবে। কারণ প্রার্থীরা হলফনামায় যে আয় ব্যায়ের হিসাব দেন তা সঠিক কি না নির্বাচন কমিশন উচিত তা পরীক্ষা করা। আর এটি না করার কারণে প্রার্থীরা সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না।
সারাবাংলা/জিএস/এসএমএন
খুলনা সিটি করপোরেশন রাজশাহী সিটি করপোরেশন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সিটি নির্বাচন সিলেট সিটি করপোরেশন