ব্যক্তিগত নয়, যা বলেছি তা রাষ্ট্রীয়: বার্নিকাট
২৬ জুলাই ২০১৮ ১৮:০২
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম, অরাজতকার অভিযোগ তুলে মাসখানেক আগে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাট। বার্নিকাটের ওই উদ্বেগের সমালোচনা করেছিলেন সরকারের তিনমন্ত্রী। তারা বলেছিলেন, মার্সিয়ার এই বক্তব্য ব্যক্তিগত। তবে মার্সিয়া জানালেন, তার ওই বক্তব্য রাষ্ট্রেরই বক্তব্য।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ শেষে মার্সিয়া বার্নিকাট সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নো। দায়িত্ব পালনকালে আমার ব্যক্তিগত মন্তব্য প্রকাশ করার সুযোগ নেই। খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে যা বলেছি তা আমার রাষ্ট্রেরই বক্তব্য।’
বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎকালে তিন সিটি নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক দলগুলোর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে কথা বলেন মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাট। এদিন প্রায় দুই ঘণ্টা নির্বাচন কমিশনে ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
মার্সিয়া বলেন, ‘দেশের সব স্থানীয় নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন যেন সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ-সুষ্ঠু হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনটি আশা করে। নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল যাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পায় সেটিও নিশ্চিত করা জরুরি।’
এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করি, সংলাপ করি। আমরা আশা করতে চাই, এই কমিশন সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন করতে পারবে। তিন সিটি (বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী) নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে এমনটি আশা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।’
খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম, অরাজকতার অভিযোগের খবরে গত ২৯ জুন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ জানায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এ বক্তব্যের সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের তিন মন্ত্রী।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান সম্পর্ক ও উভয় দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়— এমন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা উচিত। আমরা পৃথিবীর যে কোনো দেশের নির্বাচন কিংবা অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কখনো কথা বলিনি। তাই গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের এমন মন্তব্য কাম্য নয়।’
‘বার্নিকাটের বক্তব্য ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হতে পারে’ বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
তিনি বলেন, ‘বার্নিকাট ঠিক এভাবে বলেননি। তিনি যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হতে পারে। গাজীপুর বা খুলনার জনগণ জানে কী নির্বাচন হয়েছে। যে যেই পর্যবেক্ষণ দিক না কেন, এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
বিএনপির সুরে সুর মিলিয়ে নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য না করতে রাষ্ট্রদূতদের আহ্বান জানান খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘তাদের কথা আমলে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না। তাদের কথা আমলে নিয়ে কথা বললে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। বিএনপির কথাবার্তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে অত্যন্ত দায়িত্বশীল বিদেশি রাষ্ট্রদূতও কথাবার্তা বলেন, তাদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হয়ে যখন কথাবার্তা বলেন তখনই আমাদের দুঃখ হয়।’
বিবৃতির কারণে মন্ত্রীদের সমালোচনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তার জবাবে বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সমালোচনা করার অধিকার হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আমি যে বক্তব্য দিয়েছি তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই মন্তব্য। সরকারের সমালোচনাকে আমি গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য হিসেবেই নিয়েছি।’
২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে আসছে মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাট। বার্নিকাটের মেয়াদ শেষ হওয়াতে তার জায়গায় নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে আর্ল রবার্ট মিলারকে নিয়োগ দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৭ জুলাই রবার্ট মিলারের নাম ঘোষণা করেন।
রবার্ট মিলার বর্তমানে বতসোয়ানায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কনস্যুল জেনারেল ছিলেন।
এ ছাড়া তিনি ভারতের নয়াদিল্লি, ইরাকের বাগদাদ এবং ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার স্টেট ডিপার্টমেন্টের ‘হিরোইজম’সহ একাধিক পদকও পেয়েছেন।
সারাবাংলা/জিএস/একে
আরও পড়ুন
সরকারকে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে