দুদক সরকারের দুর্নীতি ধোয়ার মেশিন: রিজভী
২৭ জুলাই ২০১৮ ১৩:৩৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সরকারের দুর্নীতি ধোয়ার মেশিন হিসেবে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (২৭ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘গতকাল এক অনুষ্ঠানে যখন প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির মাধ্যমে মানুষের সম্পদ লুটপাট না করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছিলেন, তখন কয়লা খনির দুর্নীতির খবরে দেশ-বিদেশ সরগরম। ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকারের মুখে উন্নয়নের জোয়ার, আর কাজে দুর্নীতির পাহাড়।’
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে বিশাল পরিমাণ কয়লা লুটপাটের পর দুদক তদন্ত শুরু করেছে। ‘যেন রোগী মরিবার পর ডাক্তার আসিলেন।’ আসলে দুদক তো সরকারের দুর্নীতি ধোয়ার মেশিন। আর বিরোধীদলের জন্য টর্চারিং মেশিন। দুদকের তদন্ত আইওয়াশ মাত্র। আসলে এ অবৈধ সরকারের আমলে মহা দুর্নীতি, সুপার দুর্নীতি, মেগা দুর্নীতিরই জয়জয়কার’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘শেয়ার মার্কেট থেকে শুরু করে পদ্মা সেতু হয়ে ব্যাংক-বীমা-আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পরীক্ষা ও সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষার হাইপার দুর্নীতি মহা ধুমধামেই চলছে এ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়। তথ্যমন্ত্রী তথ্য দিয়েছেন যে, পিয়নের চাকরি নিতে গেলেও নাকি ১০ লাখ টাকা লাগে। এই ১০ লাখ টাকার ভাগ কে কে পায় সেটিও তথ্যমন্ত্রী জানালে ভালো হতো।’
রিজভী বলেন, ‘কয়েকবছর ধরে লোপাট হয়ে গেল লাখ লাখ টন কয়লা। অথচ খনি কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। কারণ, খনি কর্তৃপক্ষই ‘শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল।’ আবার বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির বিপুল পরিমাণ কয়লা লোপাট হওয়া বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীন থাকাটা রহস্যজনক। খনির কয়লা উৎপাদন বন্ধ থাকার ঘোষণা, কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে আসা, গত বছর জুলাইয়ে বিদ্যূৎ কেন্দের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং গত রবিবার থেকে বিদ্যূৎ কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার পরও মন্ত্রণালয়ের হুঁশ হলো না কেন? এতেই প্রমাণ হয়, ক্ষমতাসীন মহলের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া লাখ লাখ টন কয়লা অদৃশ্য হয়ে যায়নি।’
বিপুল পরিমাণ কয়লা চুরিতে কেউ বিস্মিত নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কারণ মেগা চুরির ঘটনা কেবলমাত্র আওয়ামী লীগের আমলেই ঘটে। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন-এখন পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি হয়। দুর্নীতি-দুঃশাসনের সংস্কৃতি আওয়ামী লীগেরই। মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরে অসাধু ব্যবসায়ী ও খনি সিন্ডিকেটই জাতীয় সম্পদ কয়লা বিদ্যূৎ উৎপাদনে কাজে না লাগিয়ে কালোবাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর প্রমাণ-কয়লা লোপাটের সঙ্গে খনি দুর্নীতির তদন্তে নাম আসা প্রকল্পের একজন কর্মকর্তাকে বিদেশ যেতে ৪২ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। তাই এই কয়লা লোপাটের মহা দুর্নীতির দায় সরকার বা সরকার প্রধান এড়িয়ে যেতে পারেন না।’
আইন হাতে নিয়ে বেআইনি পন্থায় মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘এই অভিযান জনমনে আতঙ্কের হিম শীতল বাতাস বইয়ে দিচ্ছে। প্রতিদিনই বন্দুকযুদ্ধের নামে চলছে মানুষ হত্যার উৎসব। মাদক অভিযান শুরু থেকে এ পর্যন্ত বন্দুক যুদ্ধে প্রায় আড়াই শ’ ব্যক্তিকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের বাহিনীগুলো গর্বের সঙ্গে জোরেসোরে মাদকবিরোধী অভিযানের কথা বলছে। কৃতিত্ব দাবি করছেন মাদক নির্মূলের। কিন্তু জনসমাজে মাদকের ব্যাপ্তি কতটুক হ্রাস পেয়েছে তা সবাই টের পাচ্ছে। বেআইনি কর্মকাণ্ড বেআইনি পন্থায় দমন করা যায় না। প্রয়োজন হয় ন্যায় ভিত্তিক আইনের শাসনের প্রয়োগ।’
সারাবাংলা/এজেড/একে
আরও পড়ুন