‘রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্তের লেখা স্বাধীনতার প্রেরণা দিয়েছিল’
২৭ জুলাই ২০১৮ ২১:০৮
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা বাঙালিকে স্বাধীনতার আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন।
শুক্রবার (২৭ জুলাই) উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ আয়োজিত রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত স্মরণ অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। উদীচী প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে বার্ষিক এই কর্মসূচি এবার বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে নগরীর নন্দনকাননের ফুলকিতে একে খান স্মৃতি মিলনায়তনে।
অনুপম সেন বলেন, উনবিংশ শতকের শুরুতে বাঙালি ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বুঝতে পারল, ইংরেজরা তাদের শোষণ করছে। ইংরেজদের শোষণের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে স্বাধীনতা লাগবে। স্বাধীনতার এই যে চেতনা সেটা ১৯৪৭ সালে এসে বাস্তবায়ন হল। তবে বাঙালি প্রকৃত স্বাধীনতা পেল না। পরবর্তীতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাঙালি যে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আসল সেটা কিন্তু ইংরেজবিরোধী ওই চেতনার উত্তরসূরি।
‘ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধ অর্থাৎ বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনে তিন কবির লেখা বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। এরা হলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য’- যোগ করেন অনুপম সেন
তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্যের এই তিন কবিই কিন্তু জন্মেছিলেন পরাধীন দেশে। বলা হয়ে থাকে, পরাধীন দেশে কোনো নবজাগরণ হয় না। কিন্তু তিন কবি তাদের সহিত্যকর্মে নবজাগরণ ঘটিয়েছেন।
অনুপম সেন আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথের মধ্যে প্রথমদিকে ইংরেজদের প্রতি মোহ ছিল। এ জন্য যারা সমাজতন্ত্রের রাজনীতি করতেন, তারা রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া কবি বলতেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ইংরেজ মোহ বেশিদিন ছিল না। তিনি কোনদিন মানুষের মুক্তির স্বপ্ন থেকে সরেননি। এজন্য যারা তাকে বুর্জোয়া কবি বলতেন, পরে তারাই তাকে মাথায় তুলে নিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ শুধু কবিতা লিখেননি, তিনি গান, নাটকসহ সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণ করেছেন। তিনি বিশ্বিসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছেন।
নজরুল সম্পর্কে তিনি বলেন, নজরুল যখন বাংলা সাহিত্যে এলেন, তখন বাঙালির স্বাধীনতার চেতনা চূড়ান্ত রূপ পেয়েছিল। তিনি অগ্নিবীণা হাতে নিয়ে অগ্নিমশাল জ্বালিয়েছিলেন। তাকে বলা হয় বিদ্রোহী কবি। নজরুলের জন্য এর চেয়ে ভালো কোনো অভিধা আর হতে পারে না। সুভাষ বসু বলেছিলেন-আমরা যখন যুদ্ধ করব তখনও নজরুলের গান গাইবো। আমরা যখন জেলে থাকব, তখনও নজরুলের গান গাইবো। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিও তাদেও নিজস্ব সঙ্গীত হিসেবে নজরুলের গানকে ব্যবহার করেন।
সুকান্ত ভট্টাচার্য সম্পর্কে অনুপম সেন বলেন, সুকান্তের কবিতায় মানুষের শ্রেণিসংগ্রামের কথা খুব সাধারণভাবে প্রকাশ পেয়েছে। মাত্র ২০ বছর বয়সী একজন ছেলে কি সুন্দরভাবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কবিতা লিখেছেন! যতদিন বৈষম্যের সমাজব্যবস্থা, মানুষের উপর মানুষের শোষণ থাকবে, ততদিন এর বিরুদ্ধে সুকান্তের কবিতা মানুষকে জাগ্রত করে যাবে।
উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা শীলা দাশগুপ্তার সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন সভাপতি শহীদজায়া বেগম মুশতারি শফি।
অনুষ্ঠানে তিন কবির লেখা গান, নাচ ও কবিতা দলীয় ও এককভাবে পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই