মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে তিন সিটির নির্বাচনী প্রচারণা
২৮ জুলাই ২০১৮ ১০:২২
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আর একদিন পরই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ৩০ জুলাই অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ শনিবার (২৮ জুলাই) মধ্যরাত থেকে। এদিন রাত ১২টা থেকে সব ধরনের যান চলাচলেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে শুক্রবার (২৭ জুলাই) মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করেছেন বহিরাগতরা। শনিবার সকাল থেকে তিন সিটিতে টহল শুরু করেছেন ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এ ছাড়াও, আজ মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় কমিশনের অনুমোদিত স্টিকারবিহীন মোটরসাইকেল চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে প্রধান সড়কে (হাইওয়ে) গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও ডাক বিভাগের গাড়ি এই নির্দেশনার বাইরে থাকবে। ভোটের দিন নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র সারাবাংলা’কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ সারাবাংলা’কে বলেন, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করতে ইসির পক্ষ থে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে যেকোনো ধরনের সহিংসতা ও কারচুপি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসির প্রস্তুতি
নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে রাজশাহীতে ১০ জন, বরিশালে ১০ জন এবং সিলেট সিটিতে ৯ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিন প্রতিটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভোটকেন্দ্রে ২৪ জন এবং সাধারণ ভোটকেন্দ্রে (ঝুঁকিমুক্ত) ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া, তিন সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতিটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে র্যাবের টিম এবং বিজিবি সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন
নির্বাচন উপলক্ষে রাজশাহীতে ১৫ প্লাটুন, বরিশালে ১৫ প্লাটুন এবং সিলেটে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যরা ভোটের দুই দিন আগে, ভোটের দিন এবং ভোটের পরের দিনসহ মোট চার দিন মাঠে থাকছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব, পুলিশ ও কয়েক প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে। এ ছাড়াও গত ১০ জুলাই থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একজন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
তিন সিটিতে মোট প্রার্থীর সংখ্যা
রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট তিন সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মোট ১৯ জন। এ ছাড়া, ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৮১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জনসহ মোট ৫৪৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাজশাহী: রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড ৩০টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০টি। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৮টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ২৬টি। নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৬০ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫২ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজশাহী সিটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ আমিরুল ইসলাম।
পাঁচ মেয়র প্রার্থী হলেন— এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল (ধানের শীষ), মো. হাবিবুর রহমান (কাঁঠাল), মো. শফিকুল ইসলাম (হাতপাখা) ও অ্যাডভোকেট মুরাদ মুর্শেদ (হাতী)।
সিলেট: সিলেট সিটি নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড ২৭টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৯টি। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৪টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯২৬টি। নির্বাচনে মেয়র পদে সাত জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১২৭ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৬২ জন নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রিটানিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পাালন করছেন মো. আলিমুজ্জামন।
মেয়র প্রার্থীরা হলেন— বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান (নৌকা), মো. আরিফুল হক (ধানের শীষ), বদরুজ্জামান সেলিম (বাস), এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (টেবিল ঘড়ি), আবু জাফর (মই), এহসানুল হক তাহের (হরিণ) ও ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন (হাতপাখা)।
বরিশাল: বরিশালে সিটি নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড ৩০টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০টি। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১২৩টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭৫০টি। নির্বাচনে মেয়র পদে সাত জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৫ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এই সিটিতে রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন মুজিবুর রহমান।
মেয়র প্রার্থীরা হলেন— সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ (নৌকা), মজিবর রহমান সরওয়ার (ধানের শীষ), ডা. মনীষা চক্রবর্তী (মই), মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব (হাতপাখা), অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ (কাস্তে) ও ইকবাল হোসেন (লাঙ্গল)।
আরও পড়ুন-
সিটি নির্বাচন: আয়ে এগিয়ে লিটন, সম্পদে বুলবুল
রাজশাহী সিটিতে বহিরাগতদের অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা
বরিশালে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ
বরিশালে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি নয়, নির্দেশ হাইকোর্টের
তিন সিটিতে প্রচারণায় এমপিদের অংশ না নিতে স্পিকারকে ইসির চিঠি
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
বরিশাল সিটি করপোরেশন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন রাজশাহী সিটি করপোরেশন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সিটি নির্বাচন সিলেট সিটি করপোরেশন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন