Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের অভাবেই ছড়ায় ২১ শতাংশ হেপাটাইটিস রোগ


২৮ জুলাই ২০১৮ ১৩:৩৪

।। জাকিয়া আহমেদ,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: গত ২১ জুলাই লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রাজীব মীর। এর ঠিক দেড় মাস আগে ৪২ বছরের রাজীব জন্ডিসে আক্রান্ত হন। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হয়। তার লিভার সিরোসিস হয়েছে জানিয়ে লিভার প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন সেখানকার চিকিৎসকরা। তবে লিভার প্রতিস্থাপনের আগেই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান রাজীব মীর।

বিজ্ঞাপন

রাজীব মীরের মতো আরও অসংখ্য রোগী হেপাইটাইসিস বি ও সি ভাইরাসের কারণে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছর দেশে ২০ হাজার মানুষ হেপাটাইটিস রোগে মারা যাচ্ছেন আর বিশ্বে মারা যাচ্ছেন এক কোটি ৪০ লাখ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, হেপাটাইটিস এ, বি, সি ও ই-ভাইরাসের কারণে লিভার রোগের প্রকোপ বেশি। আর এর মধ্যে আবার হেপাটাইসিস বি ও সি ভাইরাস দায়ী লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটিতে। শুধু বাংলাদেশেই ২১ শতাংশ হেপাটাইটিস রোগ ছড়ায় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের অভাবে। সাধারণত, ব্যবহার হওয়া সিরিঞ্জ বা সুঁই এবং দূষিত রক্ত শরীরে নিলে হেপাটাইটিস বি ও সি ছড়ায়, আর হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাস ছড়ায় সাধারণত খাবার ও পানীয়র মাধ্যমে। সচেতনতা, বিশুদ্ধ খাবার পানীয়, নিরাপদ ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ বিশুদ্ধ রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগের প্রতিকার সম্ভব।

বাংলাদেশে শতকরা ৬ জন হেপাটাইটিস বি এবং শতকরা শূন্য দশমিক ৯ ভাগ অর্থাৎ প্রায় এক শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের শেষ দিকে হেপাটাইটিস বি আক্রান্তদের সংখ্যা মাত্র ৯ শতাংশ । আর হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ রোগীর রোগ নির্ণয়ের আওতায় আসলেও হেপাটাইটিস বি এর ৮ শতাংশ ও সি এর ৭ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নিতে সমর্থ হয়েছেন। গবেষণা বলছে, অত্যন্ত জটিল রোগে আক্রান্ত এ রোগীদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই চিকিৎসার আওতায় আসে না। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস বি আক্রান্তদের ৯০ শতাংশ ও সি ভাইরাসে আক্রান্তদের ৮০ শতাংশ রোগীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসার জন্য তাদের গ্লোবাল টার্গেট নির্ধারণ করেছে।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান ও সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ফর দি স্টাডি অব দি লিভার (এসএসএএসএল) এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে সংক্রমিত। এর মধ্যে আবার প্রায় ৮০ লাখ থেকে এক কোটি মানুষ ক্রনিক ( দীর্ঘমেয়াদি) ভাবে এ রোগে আক্রান্ত।

অধ্যাপক ডা. মাহতাব বলেন, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ শতাংশ রোগী হেপাটাইসিসের বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত। এরা জীবনের কোনও না কোনও এক সময় লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো আরও কঠিন রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

এই লিভার বিশেষজ্ঞ  বলেন, সঠিক সময়ে যদি সঠিক ওষুধ রোগীকে দেওয়া যায়, তাহলে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হেপাটাইটিস রোগে কেমন করে রোগী আক্রান্ত হন জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. মাহতাব বলেন, সাধারণত ব্যবহার হওয়া সিরিঞ্জ বা সুঁই এবং দূষিত রক্ত শরীরে নিলে হেপাটাইটিস বি ও সি ছড়ায়, আর হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাস ছড়ায় সাধারণত খাবার ও পানীয়র মাধ্যমে।
অধ্যাপক ডা. মাহতাব বলেন, আমাদের দেশে ২১ শতাংশ হেপাটাইটিস রোগ ছড়ায় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের অভাবে। সাধারণত, ব্যবহার হওয়া সিরিঞ্জ বা সুঁই এবং দূষিত রক্ত শরীরে নিলে হেপাটাইটিস বি ও সি ছড়ায়। আর হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাস ছড়ায় সাধারণত খাবার ও পানীয়র মাধ্যমে। সচেনতা, বিশুদ্ধ খাবার পানীয়, নিরাপদ ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ও রক্ত গ্রহণের আগে সে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগের প্রতিকার সম্ভব।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নূর ই আলম ডিউ সারাবাংলাকে বলেন, হেপাটাইসিস বি ও সিতে আক্রান্তদের মধ্যে শিশুই বেশি। অন্যদিকে, ই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি।

২৮ জুলাই ( শনিবার) বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। ২০১০ সাল থেকে  প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ

হেপাটাইটিস দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর