একপেশে নির্বাচনের ‘ডিজাইনার’ ইসি ও পুলিশ প্রশাসন
২৮ জুলাই ২০১৮ ১৩:৫৬
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন একপেশে নির্বাচনের ‘ডিজাইনার’ হিসেবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (২৮ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘সরকারের নির্দেশে তিন সিটি করপোরেশনে একপেশে নির্বাচনের ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন।’
তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন মহল একটা ধুলিঝড়ের সৃষ্টি করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী সাধারণ ভোটারদের অধিকার ফিরে পাওয়াকে অপরাধ হিসেবে গন্য করে।সেজন্য তারা ভোট সন্ত্রাস ও ভোট কারচুপির নতুন নতুন মডেল আবিষ্কার করে যাচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘তিন সিটিতে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকেই নৌকা মার্কার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ আসতে থাকে। পাশাপাশি বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট প্রার্থী এবং সমর্থক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান এক চরম পর্যায়ে উপনিত হওয়ার খবর আমরা পাই। কিন্তু এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই নির্বাচন কমিশনের।’
খুলনা-গাজীপুর নির্বাচনের মতোই আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে বিরোধী দলের ভোটার ও পোলিং এজেন্ট শূন্য করার এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে সরকারের হাতের মুঠোয়, সে প্রমাণ নিজেরাই রেখে যাচ্ছে। তিন সিটিতে তফসিল ঘোষণার পর বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার না করার প্রজ্ঞাপন জারির উদ্যোগ নিয়েছিল ইসি। কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আপত্তির মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কমিশন।’
তিনি বলেন, ‘প্রচারণা শুরুর পর থেকেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে আগ্রাসী আক্রমণ চালাচ্ছে। বিরোধী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের তালিকা ধরে গ্রেফতার অব্যাহত আছে। অবিরাম পুলিশী হয়রানিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের অসহায় পরিবার।’
‘তাদের নামে মামলা না থাকলেও পেন্ডিং মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতারের পর বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের অবস্থানও জানায় না পুলিশ। আর নির্বাচন নিয়ে এতো অনাচারের পরও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে নির্বাচন কমিশন’—অভিযোগ রিজভীর।
তিনি বলেন, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় গতকাল (২৭ জুলাই) সারারাত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে। বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বলেছে, ২ আগস্টের আগে কাউকে যেন সিটি এলাকায় না দেখি। গত পরশু (২৬ জুলাই) রাত থেকে বিএনপি নেতা জুলহাস উদ্দিন মাসুদ, আব্দুল মান্নান, নাসির আহমেদ, শ্রমিক দল নেতা নুরু মিয়া ও ৩০ নং ওয়ার্ডের ছাত্রদল-যুবদল সভাপতিসহ প্রায় ৩০ জনের মতো নেতা-কর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় গণগ্রেফতারের গতি থামছেই না উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘সেখানে নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট কারচুপির মহা আয়োজনের আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রায় ৯০ শতাংশ আওয়ামী সমর্থিত লোকদের পোলিং ও প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভোটের আগের রাতে নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপার ভোটকেন্দ্রে লুকিয়ে রাখা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ধানের শীষের প্রার্থী। ভোটের আগের দিন প্রিজাইডিং অফিসারদের দিয়ে ভোট কেটে সেটি লুকিয়ে রাখা হবে হেড মাস্টার অথবা এ্যাসিসটেন্ট হেড মাস্টারের রুমে— এমনটি আশঙ্কা করছেন অনেকে।’
নৌকা মার্কার প্রার্থী জোর করে বিজয়ী হওয়ার জন্য হাজার হাজার লোককে সিটি এলাকায় ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও অন্যান্য আবাসস্থল দখল করে নিয়েছে আওয়ামী লীগের বহিরাগত লোকেরা ’
রিজভী বলেন, ‘সিলেট সিটি নির্বাচনেও রাজশাহী ও বরিশালের মতোই চিত্র। নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মধ্যে কোনো আনন্দ উচ্ছ্বাস নেই। ভোটারদের মনে একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছে। পরশু রাতেও বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে, গ্রেফতারও করেছে কয়েকজনকে। আর ইতোমধ্যে মামলা দিয়ে কয়েক শো নেতাকর্মীকে ঘরছাড়া করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/এজেড/জেডএফ