নিখোঁজ তিন কিশোরকে গ্রেফতার দেখালো র্যাব
২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৯:৪০
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বনানীর নিখোঁজ হওয়া তিন কিশোরসহ চারজনকে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতার দেখিয়েছে র্যাব। এদের মধ্যে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থেকে একজনকে ও মহাখালী থেকে তিন কিশোরকে গ্রেফতার করার কথা জানায় র্যাব-২ এর উপ-পরিচালক মেজর মোহাম্মদ আলী।
র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে সাড়ে ৮টার দিকে তাদের এক অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর পরিবারের অভিযোগ ছিল, তিন কিশোরকে রোববার অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর রাতে সাদা হাইয়েস মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে গেছে কে বা কারা। মঙ্গলবার পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে বনানী থানায় জিডিও করা হয়েছে। জিডি নম্বর-১৭৮৪।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতারক চক্রের সদস্যরা অভিনব পন্থায় বিকাশের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করত। এ অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন, নাসির হোসেন (২২) পিতা-মনসুর আলী, মো. রাসেল (২২) পিতা ফোরকান গাজী, মো. হানিফ (২০) পিতা আব্দুর রাজ্জাক ও শাহাব উদ্দিন (২০) পিতা মো. ইব্রাহিম। এদের মধ্যে শাহাব উদ্দিন বাদে বাকি তিনজনের নাম ও পিতার নামের সাথে বনানীর নিখোঁজ তিন কিশোরের নাম ও পিতার নামের হুবহু মিল রয়েছে।
আটককৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর র্যাব জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই চক্রের সদস্যরা তাদের নিজেদের একটি নাম্বারে বিকাশ করার সময় কৌশলে বিকাশ রেজিস্টারের ছবি তুলে নেয়। সংগৃহীত ছবি তারা গ্রুপ লিডারের নিকট পাঠিয়ে দেয়ার পর উক্ত রেজিস্টারে থাকা গ্রাহকদের মধ্যে কয়েকজনকে টার্গেট করে।
এই চক্রটি ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে লেনদেন করা টাকার চেয়ে বেশি টাকার এসএমএস তৈরি করে এসএমএসটি টার্গেট করা ব্যক্তির মোবাইলে পাঠায় যাতে উক্ত মেসেজ এর প্রেরক হিসাবে লেখা দেখা যায়। পরবর্তীতে উক্ত ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে যে স্থান হতে বিকাশ করা হয়েছে, প্রতারক চক্র তাকে সে জায়গার কথা উল্লেখ করে জানায় যে আপনার মোবাইলে টাকাটি ভুলে দুইবার পাঠানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী বিকাশের অরিজিনাল মেসেজ হিসাবে তা বিশ্বাস করে প্রতারকদের আহ্বানে সাড়া দেয়। প্রতারক চক্রটি ভুক্তভোগীকে তার নিকট আত্মীয় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাই জরুরী টাকার প্রয়োজন ইত্যাদি বুঝিয়ে দ্রুত টাকা পাঠানোর জন্য বাধ্য করে। ভুক্তভোগী প্রতারক চক্রের নিকট টাকা পাঠিয়ে দেয়ার পর বিষয়টি ভুয়া বা প্রতারণা হিসাবে চিহ্নিত হবার পর ভুক্তভোগী প্রতারকচক্রের সাথে যোগাযোগ করলে তাদের কলার টিউন হিসাবে “এই মুহূর্তে আপনার কাঙ্ক্ষিত মোবাইল নম্বরে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না” শুনে টাকা ফেরত পাবার আশা ছেড়ে দেয়। এভাবে চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে নিরীহ মানুষের নিকট থেকে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
চক্রটি এভাবে প্রতিমাসে গড়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা প্রতারণা করে সংগ্রহ করে আসছে। এছাড়াও এ চক্রের মূল হোতারা ফরিদপুর, গাইবান্ধা ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে গ্রামের নিরীহ মানুষের নিকট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর র্যাব আরও জানায়, তারা ফেসুবক ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে পুরাতন মালামাল বিক্রির জন্য আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাকে আকর্ষণ করার পর পণ্যের ২০ শতাংশ টাকা অগ্রিম বিকাশের মাধ্যমে পাঠানোর জন্য বলে। টাকা পাওয়ার পর তারা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য ক্রেতার ঠিকানায় পৌঁছে দেবে এবং তখন অবশিষ্ট টাকা পণ্য হাতে পাবার পর পরিশোধ করতে হবে। এভাবে ক্রেতা রাজি হয়ে অগ্রিম অর্থ পাঠানোর পর তারা সিমটি পরিবর্তন করে ফেলে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা মোবাইল সিম সংগ্রহের ক্ষেত্রে দরিদ্র, নেশাগ্রস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১০০ টাকার সিম ৫০০ টাকা বা তারও অধিক টাকায় কিনে চক্রটি এই ধরনের অপরাধ করে আসছে, যাতে এই চক্রটির সঠিক ঠিকানা চিহ্নিত করা না যাচ্ছিল না।
সারাবাংলা/ইউজে/এমএ