Saturday 05 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

 ‘রোগী মারা গেলেই ডাক্তারদের দোষারোপ করা উচিত নয়’


২৮ জুলাই ২০১৮ ২১:১৭ | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ২২:২১
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ডাক্তারদের নিরাপত্তা দেওয়া জাতীয় দায়িত্ব। হাসপাতালে রোগী মারা গেলেই ডাক্তারদের দোষারোপ করা উচিত নয়। মানুষ অসুস্থ হবে, মারা যাবে-এটা প্রকৃতির নিয়ম। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রথমে দেখতে হবে ঘটনায় দোষ কার, ডাক্তারের অবহেলার কারনেই যে রোগী মারা গিয়েছে-এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাদের পিটিয়ে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নেওয়া কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

আজ শনিবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে সেমিনারটির আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশনন ফর দ্যা স্টাডি অব লিভার ডিজিজ বাংলাদেশ ( এএসএলডিবি)।

বিজ্ঞাপন

সাবেক এই বিচারপতি বলেন, চিকিৎসকবিহীন একটা দেশের কী অবস্থা হবে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, চিকিৎসকরা আমাদের বন্ধু, তাদের সাহায্য আমাদের প্রয়োজন। রোগী মারা গেলে দেখতে হবে চিকিৎসকের অবহেলার জন্য রোগী মারা গেল কি-না। অবহেলায় যদি মারা যায় তাহলে অবশ্যই তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। সেটি না করে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে নিয়ে যাওয়া কাম্য হতে পারে না, এটি তার পেশার প্রতি অবমাননা।

এসব হেনস্তার কারণে অনেক ডাক্তার গ্রামে যেতে চায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি থাকাকালে এমন কিছু ঘটনার অবতারণা করে তিনি বলেন, চিকিৎসা সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আমি বিচার কাজ পরিচালনা করেছিলাম। সেখানে দেখেছি, চিকিৎসকদের চেয়ে মালিকপক্ষের বা ম্যানেজমেন্টের লোভ লালসার কারণে বেশি সংখ্যক রোগী মারা যায়। তাই ডাক্তারদের হেনস্তার বিষয়ে আইন হওয়া প্রয়োজন।

এর আগে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আগামীতে কেউ আর চিকিৎসা পেশায় আসবে কি-না জানি না।

কিছুদিন আগে সেন্ট্রাল হাসপাতালের এক ঘটনায় বরণ্যে চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহসহ চিকিৎসকদের হেনস্তা, চট্রগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালের ঘটনাসহ বেশকিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডাক্তাররা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। চেম্বারে নিরাপত্তা না থাকলে কিভাবে সেবা দেবেন ডাক্তার।

বাংলাদেশের ডাক্তাররা রোগীকে ৪৯ সেকেন্ড সময় দেন-বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার এ পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, আমি এর প্রতিবাদ করেছি, তাদের এ পরিসংখ্যান ঠিক নয়।

গত কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে এক সাংবাদিকের মেয়ে মারা যাবার ঘটনায় ডাক্তারদের তরফ থেকে হুমকি দেওয়া, সাংবাদিকদের চিকিৎসা দেব না—যে বলেছিল সে আমাদের গোত্রের কি-না সে বিষয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে, তারা আমাদের লোক না।

অনুষ্ঠানে সারাবাংলা.নেট ও গাজী টিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, আমাদের দেশে রোগীদের বড় অভিযোগের জায়গা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সঠিক ডায়াগনোসিস হয় না। আরেকটি হলো, এসব রোগ সর্ম্পকে মানুষ জানতে পারছে কি-না, মানুষ কতোটা সচেতন হচ্ছে, মানুষ তথ্য পাচ্ছে কি-না—তাই সচেতনতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে ‘পাবলিকক্স হেলথ’ বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এসব রোগ এড়াতে কোন কাজ করা যাবে না, কেমন জীবনাচর্চা করা উচিত সেসব মানুষকে জানতে হবে, আর এখানেই কাজ করতে হবে গণমাধ্যমকে। ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূল করতে চাইলে সমাজের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

আয়োজক সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব অনুষ্ঠানে বলেন, হেপাটাইটিস বি ও সি চিকিৎসাযোগ্য এবং চিকিৎসায় অনেকটা নিরাময় হয়। তবে চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল। কিন্তু লিভারের এই রোগের বেশিভাগ সময় লক্ষণ থাকে না। এ জন্য অনেক সময় ক্যান্সার হয়ে যাবার পরে যখন ধরা পরে তখন কিছু করার থাকে খুব কমই।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমান বলেন, অনেকে আছেন, যারা জানেন না তাদের এই রোগ আছে। আর না জেনেই এই রোগ ছড়াচ্ছেন। এ জন্য প্রথমে রোগ শনাক্ত করার দিকে নজর দেওয়ার আহ্ববান জানান তিনি। তিনি জানান, বাচ্চাদের মাধ্যমে এই রোগ বেশি ছড়ায়, যা বয়স্কদের মাধ্যমে একটু কম। হেপাটাইটিস রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খাবারের দিকেও নজর দিতে হবে বলে জানান তিনি। সেমিনারের শুরুতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রথমে একটি র‍্যালি বের করা হয়।

এ ছাড়া সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. ফারুক আহমেদ।

সারাবাংলা/জেএ/এমআই

ডাক্তার প্রেসক্লাব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর