Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাহাড়ে ঝুঁকিতে দেড় লাখ মানুষ, ৪ দিনে ৬ জনের মৃত্যু


২৯ জুলাই ২০১৮ ১৪:৫৮

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

কক্সবাজার: কক্সবাজারে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের মাঝে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে দেড় লাখ মানুষ। গত চার দিনে পাহাড় ধসে শিশুসহ মারা গেছে ছয়জন। আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্ধশত ঘরবাড়ি।

চলমান এ বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধ্বসে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলেও এসব তোয়াক্কা করছে না পাহাড়ে থাকা লোকজন। ঝুঁকির পরেও তারা স্বেচ্ছায় নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছে না।

তাই প্রশাসনও বাধ্য হয়ে জোরপূর্বক তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছে। উচ্ছেদ করছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি।

তবে এবারে পাহাড়ে বসবাস করা লোকজনের জন্য স্থায়ী পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এই আশ্বাসে আশার আলো দেখছেন পাহাড়ে থাকা লোকজন।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ২৫ জুলাই ভোরে কক্সবাজার শহরের বাঁচামিয়ার ঘোনায় পাহাড় ধ্বসে ৪ ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে। একই দিনে রামু উপজেলার মিঠাছড়িতে পাহাড় ধ্বসে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরের দিন ২৬ জুলাই পাহাড় ধ্বসে ঝিলংজা এলাকায় মারা গেছেন এক ব্যক্তি। এছাড়া গত ২৭ জুলাই ধসে পড়েছে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধদের ধর্মীয় জাদি। এছাড়া গত ৪ দিনে পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্ধশত ঘরবাড়ি।

পাহাড়ে ঝুঁকিতে দেড় লাখ মানুষ

এ পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে মাইকিংসহ ১২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিন্তু লোকজন ছাড়তে চাইছে না পাহাড়।

তাই বাধ্য হয়ে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। গত ৩ দিনে উচ্ছেদ করা হয়েছে অর্ধশত ঝুঁকিপূর্ণ বসতি। আর নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে লোকজনকে।

কেন পাহাড় ছাড়তে চাইছে না এমন প্রশ্নে লোকজন বলছেন তাদের যাওয়ার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেই। তাই তারা পাহাড়েই অবস্থান করছেন।

বিজ্ঞাপন

শহরের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ রোস্তম জানান, শহরে জায়গা কিনে ঘর করার সামর্থ্য নেই। তাই পাহাড়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে পাহাড়ে অবস্থান করছি। এ পাহাড় ছেড়ে কোথায় যাব? থাকব কোথায়? তাই এই পাহাড়েই বসবাস করছি।

শহরের লাইট হাউস এলাকার শাহাবউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জানান, ‘বেশি বৃষ্টি হলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই। স্বাভাবিক হলে আবার ফিরে আসি। এছাড়া আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই। সরকার যদি আমাদের নিরাপদ আবাসস্থল দিত তাহলে ওখানে চলে যেতাম।’

শহরের বৈদ্যঘোনা এলাকার পাহাড়ে বসবাস করা আরেক ব্যক্তি সরওয়ার কামাল জানান, ‘জীবনের ঝুঁকি থাকার পরেও থাকার কোন জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে পাহাড়ে অবস্থান করছি। শুনেছি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিরাপদ জায়গা দেওয়া হবে। ওই জায়গা দেওয়া হলে আমরা নিরাপদে থাকব।’

পাহাড়ে ঝুঁকিতে দেড় লাখ মানুষ

এ ব্যাপারে কক্সবাজার দক্ষিণ বন কর্মকর্তা মো. আলী কবির জানান, পাহাড়ে বসবাস করা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে ওই এলাকায় বনায়ন করা হলে নিরাপদ থাকবে পাহাড়। আর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনের জন্য স্থায়ী নিরাপদ আবাসস্থলের ব্যবস্থা চলছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আব্দুর রহমান জনান, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনের জীবন বাঁচাতে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হচ্ছে। তাদের আশ্রয়ের পাশাপাশি শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। আর তাদের জন্য স্থায়ী আবাসনের কাজ চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৮ বছরে পাহাড় ধ্বসে সেনা সদস্য সহ দের’শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরপরেও প্রভাবশালী পাহাড় খেকোরা ঠিকই পাহাড় কাটছে এবং দখল করছে। আর পাহাড়ে বসবাসকারী লোকজনকে পাহাড় থেকে সরিয়ে ফেললেও তারা পুনরায় পাহাড়ে চলে যায়। এই সমস্যা সমাধানে স্থায়ী কার্যক্রম প্রত্যাশা করছে সচেতন মহল।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/একে

আরও পড়ুন,
পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্যুর হাতছানি, ঝুঁকি নিয়ে তবুও বসবাস
‘যত বড় নেতাই হোক, পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাস করলে ছাড় নয়’

কক্সবাজার ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস পাহাড়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর