Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমরা কারও সমালোচনার ধার ধারি না: ডিজি র‌্যাব


২৯ জুলাই ২০১৮ ১৭:২৬

বক্তব্য রাখছেন র‌্যাবের ডিজি

|| স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ||

ঢাকা: র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, আমরা যখন ৩ মে থেকে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি সে সময় অনেকেই সমালোচনা করেছেন। এখন তারা চুপ হয়ে গেছে। আমরা স্পষ্ট কথায় বলে দিচ্ছি কারও কোনো সমালোচনায় আমরা ধার ধারি না।’

আজ (২৯ জুলাই) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন রোধে অ্যাকশন প্লান বাস্তবায়ন শীর্ষক কর্মশালায় এ কথা বলেন বেনজীর আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘এদেশে জঙ্গিরা যতবারই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ততবারই আমরা তা ধ্বংস করে দিয়েছি। আমরা তা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছি। এখন আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি তাতে বিজয়ী না হয়ে ফিরব না।’

র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই মাদকের বিস্তার রয়েছে। তাই বলে সেটি জাতিকে ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এটা সহ্য করা হবে না। সব দেশেই মাদক সহনশীল অবস্থায় থাকলে আমাদের দেশেও তা সম্ভব। আর সে জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে প্রতিদিন যদি ৬০ লাখ লোক ইয়াবা সেবন করে তাহলে প্রতিদিন একশ ৮০ কোটি টাকা এবং মাসে ৬ হাজার ও বছরে ৭২ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে এ ইয়াবার জন্য।’

র‌্যাব মহাপরিচালক আক্ষেপ করে বলেন, ‘কক্সবাজারের ইয়াবা নিয়ে গত দশ বছরে সংবাদপত্রে কোনো খবর প্রকাশ করেনি। খোঁজ নিয়ে জানলাম বিভিন্ন গডফাদারদের ভয়ে সংবাদ করা হয়নি। কক্সবাজারে আমরা প্রথমে ১টা ক্যাম্প এবং রোহিঙ্গা আসার পর আরও একটা ক্যাম্প স্থাপন করেছি। সম্প্রতি মাদকের গডফাদারদের নির্মূল করতে আমরা মোট সাতটি ক্যাম্প স্থাপন করেছি। এখন যদি কোনো গডফাদার কাউকে হাত উঁচু করে ভয় দেখায়, তাহলে স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছি সেই হাত কেটে ফেলব। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমি এ কথার বিশ্বাস স্থাপন করব।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজারে র‌্যাবের নিয়মিত অভিযানের কারণে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে এলেও বর্তমানে সেই ব্যবসা সিলেটের পথে হচ্ছে বলে জানান তিনি। আর এ জন্য ভারতের ত্রিপুরা, আসাম রাজ্য থেকে সিলেট বর্ডার হয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে তিনি বিজিবি মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

কর্মশালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি ডোপ টেস্টের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময়েও ডোপ টেস্টের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রথানমন্ত্রীর কাছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে আরও ৬ হাজার ৭০০ জনবলের চাহিদা জানানো হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই তাদের জনবল সাড়ে আট হাজারে দাঁড়াবে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মাদকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ মেসেজ হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে মাদক শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। আমরা অভিযান চালিয়ে যাব। পাশাপাশি দেশে মাদকের চাহিদা নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।

কর্মশালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামালউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘অধিদপ্তর এ পর্যন্ত মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ে জড়িত মোট ১৩ হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১২ হাজারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অধিদপ্তরের মোট ৫১টি গাড়ি রয়েছে। এগুলো দিয়ে আমরা নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছি। টেকনাফের মতো একটি সংবেদনশীল জায়গায় আমাদের টহল দেওয়ার মতো কোনো গাড়ি নেই। মাত্র ১০ জন আনসার সদস্যকে নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের। এসমস্য কেটে উঠতে আরও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

মাদকবিরোধী আলাদা আদালতের তাগিদ :  দেশের প্রত্যেকটি জেলায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে মাদকবিরোধী বিশেষ আদালত গঠনের তাগিদ দেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে প্রতি জেলায় একটি করে তিন সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ আদালত করা যেতে পারে। কারণ, আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৮০০ জন। এ অল্প সংখ্যক বিচারক দ্বারা মাদকের বিপুল মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর লেগে যায়।’

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘দেশের ৩৬ হাজার বন্দি ধারণক্ষমতার জেলখানাগুলোয় বর্তমানে ৯০ হাজার বন্দি আছে। তাদের ৪৪ শতাংশই মাদক মামলার আসামি। এসব মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর লেগে যায়। অনেক সময় দীর্ঘ সূত্রতার কারণে মামলা নিষ্পত্তি ছাড়াই বাদ পড়ে যায়। এতে অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পায় না। যে কারণে অপরাধীরা ভয়ও পায় না।’

এ জন্য মাদক ব্যবসায়ীদের জেল না দিয়ে অর্থ জরিমানার সুপারিশও করেন তিনি।

কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশের অপরাধ বিভাগের ডিআইজি ব্যারিস্টার মাহবুব হোসেন, কর্নেল (অব.) আনিসুর রহমান, আনসার ভিডিপির উপ-পরিচালক দিলীপ কুমার বিশ্বাস, বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিসুর রহমান, জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ দফতরের সদস্য অধ্যাপক অরূপ রতন চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার প্রমুখ।

সারাবাংলা/এসএইচ/একে

অভিযান ইয়াবা গডফাদার জাতীয় মাদক র‍্যাব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর