সিসিক নির্বাচন: শঙ্কা কাটছে না ভোটারদের
২৯ জুলাই ২০১৮ ২২:১২
।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
সিলেট থেকে: সময়ের হিসেবে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট নগরীর ভোট উৎসবের। রাত পোহালেই এখানকার ভোটাররা যাবেন ভোটকেন্দ্রে । তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে ভোটকেন্দ্রে যাবেন কিনা, এখনও তেমন অনিশ্চয়তার প্রহর গুনছেন অনেকেই। ফলে ভোট নিয়ে উৎসবের মধ্যেও শঙ্কা কাটেনি ভোটারদের।
রোববার (২৯ জুলাই) সারাদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। নগরীর বন্দর পয়েন্টে কথা হয় সোহরাব উদ্দীন নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তার ধারণা, নগরীতে ভোটের হিসেবে এগিয়ে বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু ফলাফলে তিনি এগিয়ে রাখছেন আওয়ামী লীগের বদর উদ্দীন আহমেদ কামরানকে। কারণ হিসেবে তিনি বললেন, খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচনের প্রভাব এ নির্বাচনেও পড়বে। প্রশাসন হয়তো এখানেও নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবে।
এ নির্বাচনে মোট সাত মেয়র প্রার্থী থাকলেও নগরীতে আলোচনা হচ্ছে মূলত তিন জনকে ঘিরে। এর মধ্যে ভোটের হিসাবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এগিয়ে রাখা হচ্ছে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের বদর উদ্দীন আহমেদ কামরানকে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়েরও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোট টানবেন বলে নগরবাসীর ধারণা।
শনিবার রাত থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত নগরীর প্রায় ১০টি স্পটে কথা হয় অন্তত ৩০ জন ভোটারের সঙ্গে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ভোটের হিসেবে এগিয়ে রাখছেন ধানের শীষকে। তবে সোমবারের ভোটে ‘নয়-ছয়’ হলে ফলাফলে মেয়র হিসেবে কামরানকেই ধরে নিচ্ছেন তারা।
শনিবার রাতে নগরীর জিন্দাবাজার মোড়ের একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে কথা বলছিলেন পাঁচ নগরবাসী। তুমুল বৃষ্টিতে আটকে পড়া এসব ভোটারদের আলোচনার বিষয় ছিল সোমবারের ভোট। সেখানে বাবুল নামের একজন ভোটার স্থানীয় ভাষায় যা বললেন তা হলো- জামায়াতের প্রার্থী না থাকলে বিএনপি যত ভোট পেয়ে নির্বাচিত হতেন, সে হিসাব এখন আর মিলছে না। কিন্তু তারপরও কামরানকে জিততে হলে অন্তত ২০ হাজার ভোট ‘নয়-ছয়’ করতে হবে।
ওই দোকানের মালিকের বাড়ি নগরীর পাশ্ববর্তী খাদিম ইউনিয়নে। কিন্তু তিনি নগরীর ভোট নিয়ে বেশ ধারণা রাখেন বোঝা গেল। তার ভাষায়- আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে যে প্রচারণা চালাচ্ছে তাতে বোঝা গেছে তারা সিটির চেয়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বেশি চিন্তিত। যে কারণে সভা-সমাবেশে তারা সিলেটের চেয়ে জাতীয় নির্বাচনকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এটি আরিফের পক্ষে গেছে। তার মতে, নগরবাসীর কাছে এ নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ নেই। কেননা অনেকেই আগে-ভাগে ফলাফল বুঝতে পারছেন।
নগরীর দরগা গেটের হোটেল নূর জাহানের রিসিপশনে বসে কথা হয় আম্বরখানা এলাকার মুসাব্বির আহমদের সঙ্গে। তিনি জানান, সপ্তাহখানেক ধরে আই-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে এক ধরনের প্রশ্ন উঠছে। তাই সোমবারের নির্বাচন যে সুষ্ঠু এবং কারচুপিবিহীন হবে- এমনটা বলা যাচ্ছে না। তার মতে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের যে বক্তব্য এরই মধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে, তা কেতাবি বক্তব্য। এর ওপরে নগরীর বাসীর আস্থা রাখার কোনো কারণ নেই।
মুসাব্বির বলেন, মানুষ যদি কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দেওয়ার নিশ্চয়তা না পান, তবে নগরীর অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। জাতীয় রাজনীতির মতো স্থানীয় নির্বাচন নিয়েও মানুষের আগ্রহ কমছে বলে ধারণা সাবেক এ বাম ছাত্র নেতার।
নগরীর চৌহাট্টা আলীয় মাদরাসা মোড় থেকে সিএনজি অটোরিকশায় যেতে যেতে কথা হয় আব্দুল হক নামের এক বয়স্ক ভোটারের সঙ্গে। তিনি বলেন, জীবনে অনেক ভোট দেখেছি। ভোটের সময় যে উৎসব দেখতাম, এখন তেমনটি দেখি না। এখন সবকিছুতে এক ধরনের ভয় কাজ করে। তিনি বলেন, ‘কালকে যদি বাড়ির সবাই বলে, তাহলে ভোট কেন্দ্রে যাব। না হহলে ভোট নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ নেই।’
খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনের চেয়ে সিলেটের ভোটের প্রচারণায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর কেউ কারও চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে সরু অলি-গলিও পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে আছে। সব মিলিয়ে সিলেট নগরী এখন সাদাকলো। পোস্টারে পোস্টারে কোনো স্থানকে চিহ্নিত করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে ভৌগলিকভাবে বেশ পার্থক্য রয়েছে সিলেটের। রাতে তুমুল বৃষ্টি, আবার ভোর হলেই ঝকমকে রোদ। তাই লেমিনেটিং করা পোস্টারগুলো মাথার ওপর দুলছে অপ্রতিরোধ্য হয়ে। সোমবার সকালের যে ভোটযুদ্ধ, তাকে কেন্দ্র শহরবাসীর প্রতীক্ষায় শক্ত সমর্থন জোগাচ্ছে এসব সাদাকালো পোস্টার।
সিলেট নগরীর আয়তন মাত্র সাড়ে ২৬ বর্গকিলোমিটার। ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন লাখ ২২ হাজার। সংখ্যার বিবেচনায় ছোট এ নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় প্রস্তুতি রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনেরও। নির্বচন কমিশন বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। তাই সোমবার সকাল থেকে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন নির্বিঘ্নে।
এখানকার রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান বলেছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানে প্রশাসনের কোনো গাফিলতি নেই। এরই মধ্যে ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে যে ৮০টি কেন্দ্রকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলোতে প্রশাসনের সতর্ক দৃষ্টি থাকছে।
এদিকে, সিটি নির্বাচনকে ঘিরে রোববার বিকেল ৫টার পর থেকেই নগরীতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। নগরীর মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর দেখা গেছে।
সারাবাংলা/এমএস/টিআর