দৃষ্টি এখন তিন সিটিতে
২৯ জুলাই ২০১৮ ২২:৪৭
।। মাহমুদুল হাসান, নিউজরুম এডিটর ।।
ঢাকা: রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল— এই তিন সিটি করপোরেশনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে ভোট হচ্ছে সোমবার। প্রার্থীদের জনসংযোগ শেষ হয়েছে আগেই। বাকি কেবল ভোট নেওয়া আর ফল ঘোষণা। সোমবার (৩০ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ভোট নেওয়া চলবে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এই তিন সিটিতেই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। কোনো সন্দেহ নেই, সবার দৃষ্টি আজ থাকবে ওই তিন সিটির দিকে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে তিন সিটিতেই সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। যান চলাচলেও বিধিনিষেধ রয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় আজ সাধারণ ছুটি।
ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ সারাবাংলা’কে বলেন, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইসির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে যেকোনো ধরনের সহিংসতা ও কারচুপি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিন সিটির নির্বাচন ঘিরে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। কী হবে, কারা হচ্ছেন নগরপিতা— এমন হাজারও প্রশ্নের ঝড় উঠছে ভোটারদের মাঝে। মুদি দোকান থেকে চায়ের আড্ডা, বিপণিবিতান থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস— সবখানে চলছে এই একই আলোচনা।
রাজশাহী সিটির তালাইমারি এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম সুমন বলেন, আমার চাই নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। যে যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করুক। তবে নগরপিতা যেই হোক তার কাছে আমাদের চাওয়া থাকবে রাজশাহী নগরীর উন্নয়ন। বিশেষ করে নগরীর জলাবদ্ধতা ও মশার উপদ্রব থেকে আমরা রাজশাহীবাসী মুক্তি চাই।
বরিশাল সিটির টিয়াখালী এলাকার ভোটার জেবুন্নেসা খনম বলেন, বেহাল রাস্তাঘাট, পানি ও বিদ্যুতের সমস্যায় জর্জরিত বরিশালবাসী। মেয়র আসেন, মেয়র যান— ভাগ্যের বদল হয় না আমাদের। নগরবাসী নিয়মিত ট্যাক্স দিলেও নূন্যতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নির্বাচনে যে দলের প্রার্থীই হাল ধরুক, আমাদের চাওয়া থাকবে উন্নয়ন।
সিলেট সিটির দরগা পাড়া এলাকার বাসিন্দা রুমেল আহমেদ তুহিন জানান, গত সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়ে নগরীর কিছু উন্নয়ন করেছেন। তবে ক্ষমতায় যে দলের প্রার্থী আসুক, সাধারণ জনগণের মন জয় করতে চাইলে উন্নয়নের বিকল্প নেই।
ইসির প্রস্তুতি
নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে রাজশাহীতে ১০ জন, বরিশালে ১০ জন এবং সিলেট সিটিতে ৯ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভোট কেন্দ্রে ২৪ জন এবং ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ জন করে সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। এছাড়া তিন সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতিটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে র্যাবের টিম এবং বিজিবি সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে।
নির্বাচন উপলক্ষে রাজশাহীতে ১৫ প্লাটুন, বরিশালে ১৫ প্লাটুন এবং সিলেটে ১৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যরা ভোটের দুই দিন আগে, ভোটের দিন এবং ভোটের পরের দিনসহ মোট চার দিন মাঠে থাকছেন। এ ছাড়াও ১০ জুলাই থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একজন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
তিন সিটিতে মোট প্রার্থীর সংখ্যা
রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট তিন সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ১৯ জন। এ ছাড়া, ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৮১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জনসহ মোট ৫৪৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড ৩০টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০টি। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৮টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ২৬টি। নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৬০ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫২ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজশাহী সিটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ আমিরুল ইসলাম।
পাঁচ মেয়র প্রার্থী হলেন, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল (ধানের শীষ), মো. হাবিবুর রহমান (কাঁঠাল), মো. শফিকুল ইসলাম (হাতপাখা) ও অ্যাডভোকেট মুরাদ মুর্শেদ (হাতী)।
সিলেট সিটি নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড ২৭টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৯টি। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৪টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯২৬টি। নির্বাচনে মেয়র পদে সাত জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১২৭ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৬২ জন নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রিটানিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পাালন করছেন মো. আলিমুজ্জামন।
মেয়র প্রার্থীরা হলেন, বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান ( নৌকা), মো. আরিফুল হক (ধানের শীষ), বদরুজ্জামান সেলিম (বাস), এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (টেবিল ঘড়ি), আবু জাফর (মই), এহসানুল হক তাহের (হরিণ) ও ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন (হাতপাখা)।
বরিশালে সিটি নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড ৩০টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০টি। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১২৩টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭৫০টি। নির্বাচনে মেয়র পদে সাত জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৫ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এই সিটিতে রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন মুজিবুর রহমান।
মেয়র প্রার্থীরা হলেন- সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ (নৌকা), মজিবর রহমান সরওয়ার (ধানের শীষ), ডা. মনীষা চক্রবর্তী (মই), মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব (হাতপাখা), অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ (কাস্তে) ও ইকবাল হোসেন (লাঙ্গল)।
ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্র
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৩৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৪টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে নির্বাচন অফিস এই কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে দেখছে। এ জন্য কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা নির্বাচন অফিসার ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার আতিয়ার রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিন সিটির ৩৯৫টি ভোট কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে বরিশাল সিটির ১২৩ কেন্দ্রের মধ্যে ১১২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সিলেট নগরে ১৩৪টি কেন্দ্রে ৯২৬টি কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ৮০টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে নগর গোয়েন্দা শাখা। সে মোতাবেক ওই কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রগুলোতে অধিক সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন রাখা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিনা ভোটে নির্বাচিত প্রার্থীরা
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বরিশালে কাউন্সিলর হয়েছেন চার জন। এর মধ্যে তিন জন সাধারণ ও একজন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। চার কাউন্সিলর পদে একজন করে প্রার্থী থাকায় নির্বাচিত হয়েছেন তারা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা হলেন— ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে লিয়াকত হোসেন লাবলু, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে মোশাররফ আলী খান বাদশা ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে গাজী নইমুল হোসেন লিটু। তারা সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন।
এ ছাড়াও ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সমম্বয়ে গঠিত নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৪ নম্বর আসনের তিন প্রার্থীর মধ্যে একজনের প্রার্থিতা বাছাইয়ে বাতিল এবং আরেকজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিএনপি সমর্থিত আয়েশা তৌহিদা লুনাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সিলেটে সাধারণ ওয়ার্ডে মোট ১৩৭ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। মনোনয়ন যাচাই বাছাই শেষে বৈধতা পায় ১২৭ জন। বাদ পড়ে ১০ জন। সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৬৩ জন দাখিল করে বৈধতা পায় ৬২ জন। বাদ পড়েন ১ জন। সাধারণ ২০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আজাদুর রহমান আজাদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন-
সিসিক নির্বাচন: শঙ্কা কাটছে না ভোটারদের
হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সাঁতার কাটছি: মজিবুর সরোয়ার
পদ্মাপাড়ে ভোটের ঢেউ, নগরপিতা বেছে নেওয়ার অপেক্ষা
সিটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপির অভিযোগ: বরিশাল আ.লীগ
সারাবাংলা/এমএইচ/এসআই
দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook