বরিশালে মাঠে দেখা যাচ্ছে না বিএনপির নেতাকর্মীদের
৩০ জুলাই ২০১৮ ১১:৩১
।। গোলাম সামদানী, বরিশাল থেকে ।।
অন্য দুই সিটির সঙ্গে সোমবার (৩০ জুলাই) সকাল থেকে বরিশালেও শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিপুল জমায়েত দেখা গেলেও চোখে পড়ছে না বিএনপির মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের।
সকাল থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে।
এসব কেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তাদের প্রার্থীর ব্যাজ লাগিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রের সামনেই শত শত কর্মী সমর্থককে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি কেন্দ্রের কক্ষগুলোতে বিনা বাঁধায় ঢুকছেন এবং বের হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এক্ষেত্রে তাদের কোনো বাঁধাও দিচ্ছেন না।
তবে এসময় চোখে পড়েনি বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে। অর্থাৎ নিজেদের প্রার্থীর সমর্থনে ব্যাজ লাগিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়নি কাউকে। দুই একজন নেতাকর্মীকে ভোট দিতে দেখা গেলেও তাদের গলায় কোনো ব্যাজ ছিল না। শুরুতে তারা শিকারও করেননি যে তিনি বিএনপির প্রার্থীর কর্মী। পরে সাংবাদিক পরিচয়ে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করেন। বলেন, বিএনপির প্রার্থীর ব্যাজ পরে ঘোরার মতো পরিবেশ নেই।
নগরীর নড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেলো, প্রতিটি ভোটারের সঙ্গে একাধিক আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর সমর্থক ভোটকক্ষে ঢুকছেন এবং তাদের সামনেই ভোটারদের ভোট দিতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আবু ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়। বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। সারাবাংলাকে প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, ‘আমি বিষয়টি খেয়াল করেছি। চোখে পড়লে তাদের বেরও করে দিচ্ছি। সব সময় তো আর টহল দিতে পারি না। যখনই দেখছি তখনই বের করে দিচ্ছি।’
পাশেই নড়িয়া আইডিয়াল স্কুলে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। সেখানে ভোটাররা নিজেদের ভোট দিতে পারলেও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের অবাধে চলাফেরা করতে দেখা গেছে।
বরিশাল সরকারি কলেজ কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।
এ বিষয়ে কথা হয় কয়েকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, দেশে বিএনপি নেই। সেকারণেই মাঠে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে চোখে পড়ছে না।
সৈয়দ মজিদুন্নেসা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সঞ্জয় কুমার রত্ন বলেন, ‘আমি নিজে টহল দিচ্ছি। যেখানে যাদের পাচ্ছি তাদের বের করে দিচ্ছ। এরপরেও যদি কোনো অভিযোগ আসে তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে সকালে এটিএন বাংলার লিটন মোল্লা ক্যামেরা পারসনকে লাথি মারেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেসময় বিএনপিার প্রার্থী মজিবুর রহমানি সরোয়ার ভোট দিয়ে বের হন। তার ভোটার নম্বর খুঁজে না পাওয়ায় ভোট দিতে দেরি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগের উপস্থিত নেতাকর্মীরা। পরে মজিবর রহমান ভোট দিয়ে বের হওয়ার পর কয়েকজন তাকে লাথি মারতে চেষ্টা করেন। যা মজিবর রহমানের শরীরে না লাগলেও তা গিয়ে লাগে লিটন মোল্লার শরীরে।
রুপাতলী এলাকার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৬ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা গেল সেখানে কোনো ভোটার নেই, ভেতরে বসে আছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অথচ ওই বুথের সব ব্যালট পেপার শেষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জোয়ারদার বলেন, ‘ব্যালট শেষ। নতুন ব্যালট আনা হবে।’ তার সঙ্গে আরেকটু কথা বলতে চাইলে সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বের করে দেন সেখানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
ওই কেন্দ্রে কেন বিএনপির কোনো এজেন্ট নেই বা ভোটার না থাকলেও ব্যালট শেষ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় প্রিজাইডিং অফিসার মোফাজ্জল হোসেনকে। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমার কাছে নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সেখানেই কথা হয় মিজানুর রহমান নামে এক ভোটারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোট দিতে গেছিলাম। আঙুলে কালি মাখিয়ে দিয়ে বললেন, যান আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।’
এর আগে সকালে নিজের ভোট দিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান অভিযোগ করেন যে, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। তবে কিছুক্ষণ পরে এই অভিযোগ অস্বীকার করে এগুলোকে অপপ্রচার বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
আরো পড়ুন :
নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই চলছে অপপ্রচার : সাদিক আবদুল্লাহ
পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ মজিবরের
সারাবাংলা/জিএম/এসএমএন