।। নৃপেন্দ্রনাথ রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
রাজশাহী থেকে: রাজশাহীতে বর্তমান মেয়র বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে ৮৭ হাজার ৩৯৬ ভোটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে নতুন মেয়র নির্বাচিত হলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এর ফলে এক মেয়াদ বিরতির পর ফের রাজশাহীর নগরপিতার দায়িত্ব পেলেন জাতীয় চার নেতার একজন এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সন্তান।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে রাজশাহীতে ১৩৮টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে সবগুলো কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এই ফল অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন পেয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট। ফলে ৮৭ হাজার ৩৯৬ ভোটের বড় ব্যবধানে রাজশাহীতে নতুন নগরপিতা হলেন লিটন।
রাজশাহী সিটিতে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লিটন বলেন, ‘এ বিজয় বঙ্গবন্ধুর বিজয়, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়; এ বিজয় শেখ হাসিনার বিজয়।
নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে লিটন বলেন, ‘আজকের এই ক্ষণটির জন্য, এই মুহূর্তটির জন্য রাজশাহীবাসীকে দীর্ঘ পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর আগে একজন উন্নয়নের কথা বলে নগরবাসীকে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই উপহার দিতে পারেননি। আজ নগরবাসী উন্নয়নের পক্ষে, নৌকার পক্ষে তাদের রায় ঘোষণা করেছে।’ আগস্ট শোকের মাস হওয়ায় এই মাসে বিজয় মিছিল না করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
এর আগে, ২০০৮ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে মেয়র পদে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেন লিটন। এর পরের মেয়াদে ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যান তিনি। ঠিক পাঁচ বছর পর সেই বুলবুলকে হারিয়েই ফের পদ্মাপাড়ের নগরপিতা হলেন লিটন।
এর আগে, সোমবার (৩০ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে ১৩৮টি কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলে ভোটগ্রহণ। বিএনপি প্রার্থী বুলবুলের তোলা অনিয়মের অভিযোগের বিপরীতে এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী লিটন। সকালে ভোট দিয়ে তিনি নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে শতভাগের কাছাকাছি নিশ্চিত বলেও আশাবাদ জানান।
যদিও এই নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এবং বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। ভোট শুরুর আগেই বিএনপির পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহী মহানগরীর বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজে অবস্থান নেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তিনি এই কেন্দ্রে ব্যালটের হিসাব দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচনে ভোটও দেননি তিনি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড ৩০টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০টি। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৮টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৬টি।
নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৬০ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫২ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজশাহী সিটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ আমিরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন-
নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপপ্রচার চলছে
মাঠে দেখা যাচ্ছে না বিএনপি নেতাকর্মীদের
নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে, জয় নিয়ে আশাবাদী কামরান
কিছু বিশৃঙ্খলা হলেও নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে: সিইসি
রাজশাহীতে মেয়র লিটন, ২ সিটিতেও এগিয়ে নৌকা
সিলেটে নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণে বিলম্ব, ক্ষোভ বিএনপির
এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ মজিবুর রহমানের
ইভিএম: রাজশাহী-বরিশালে নৌকা, সিলেটে এগিয়ে ধানের শীষ
সারাবাংলা/এটি/টিআর