আসামের নাগরিকপঞ্জির আতঙ্ক তাড়া করছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে
৩১ জুলাই ২০১৮ ১৭:০১
।। শুভজিত পুততুন্ড, কলকাতা থেকে ।।
ভারতের আসামে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জির নাগরিকত্বের অগ্নিপরীক্ষায় ইতোমধ্যেই বাদ পড়েছে ৪০ লাখ অাসামবাসী। যা নিয়ে ভারত জুড়ে শুরু হয়ছে তিব্র আলোড়ন। ইতোমধ্যেই যার ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গে।
আসামে নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ৪০ লাখ মানুষ
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চীমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের মালদা, কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরসহ ৬ জেলা ও দক্ষিণ বঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও নদীয়া জেলায় যেখানে পূর্ববঙ্গের মানুষের সংখ্য বেশি সেখানে বইছে নতুন করে বাস্তুহারা হওয়ার আতঙ্কের চোরা স্রোত।
আসামে এনআরসি তালিকা প্রকাশের পরপরই সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিব্র প্রতিক্রিয়া জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি সরকারের তিব্র সমালোচোনা করে তিনি বলেন, ‘এতে সমস্যায় পড়বে আসামের সীমানা ঘেষে থাকা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ।’
‘নাগরিকত্ব তালিকার ফলে সমস্যায় পড়বে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ’
এর পরই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দিতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে সেখানেও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশ করা হবে এবং অবৈধ বিদেশি ও বাংলাদেশি নাগরিকদের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।’
বিধানসভার অধিবেশন শেষের পর সংবাদ সম্মেলনে দিলীপ ঘোষ জানান ‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে অসমের মতো পশ্চিমবঙ্গেও একইভাবে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি হবে এবং অবৈধ নাগরিকদের বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হবে। এরাজ্যে কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা দেওয়া হবে না। এমনকি যারা এই কাজের বিরোধিতা করবে তাদেরও বাংলা ছাড়া করা হবে।’
অাসামে এনআরসি চূড়ান্ত খসড়া তালিকা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে মন্তব্য করেছেন তারও সমালোচনা করেন দিলীপ ঘোষ।
মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) নদীয়ার জেলায় একজনসভা থেকে ফের বাংলাদেশিদের বিতাড়নের হুমকি দেন বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মাসি’ সম্বোধন করে তিনি বলেন ‘আমরা ছোটবেলায় ছুটিতে মাসির বাড়ি বেড়াতে যেতাম। সেই রকমই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা মাসির বাড়ি বেড়াতে আসার মতন এই জেলায় ঢুকছে। অসম সরকার বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সেখানে গিয়েও আমাদের এই মাসি বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়াবেন। সেই সঙ্গে মাসি এ রাজ্যেও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের মাসির মতো আগলে রাখবেন।’
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের ক্রমাগত হুমকির মুখে আতঙ্কে কয়েকপুরুষ ধরে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করা পূর্ববঙ্গের মানুষরা। মুর্শিদাবাদের কৃষক জীবনধারা বলছেন আমরা কেউ ৩০ বছর তো কেউ ৪০ বছরের বেশি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হলেও অাসামের ঘটনায় চিন্তার ভাজ ফেলেছে আমাদের এখানকার মানুষজনের কপালে। পূর্বপুরুষের হাত ধরে সবাই আজ এপার বাংলার বাসিন্দা। আসামের মত এখানে কিছু হলে কী করবো জানা নেই।
পাশের জেলা মালদার গাজোলের ব্যবসায়ী আনন্দ মণ্ডল জানান প্রায় ৪০ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস শুরু তাদের এলাকার প্রায় সবারই ভারতের ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড থাকলেও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত সকলেই। তারা বলছেন বাংলায় বিজেপির প্রভাব যে হাড়ে হাড়ে চলেছে তাতে যদি বাংলায় বিজেপি সরকার গঠন করে তবে তাদের জীবন জীবীকা কী হবে এই ভাবনা নিয়েই দিশেহারা তারা। তবে আস্থা রাখছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর।
সারাবাংলা/এসপি/এমআই