দুই থাপ্পড় মারব যারা এই ছেলেদের অপমান করে: ড. কামাল
৩১ জুলাই ২০১৮ ১৮:২৪
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের যারা অপমান করে তাদের দুই থাপ্পড় দিবেন বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন সংবিধান প্রণেতা এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন।
মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আবার আজকে কাদেরকে দেখছেন রাস্তায়? আজকে যারা কোটা আন্দোলন করে এরা কারা? এরা রাজাকারের বাচ্চা নয়, এরা এ দেশের সন্তান। যারা এই মুখে কথা দিয়েছে, তারা কে ? আসো আমার সামনে দাঁড়াও। আমাকে গুলি করে মারার আগে দুই থাপ্পড় মারবো আগে যারা এই ছেলেদেরকে অপমান করে। আসো আমার সামনে, কতো সাহস আছে তোমাদের। আমাদের যে ছেলেরা ন্যায্য প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছে, সংস্কারের প্রস্তাব করার অধিকার তাদের আছে, মৌলিক অধিকার তাদের আছে।’
লাখ লাখ জীবন দিয়ে এই অধিকার অর্জন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত দলিল যেটা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে, তাতে লেখা আছে। উনার নাম ভাঙিয়ে যারা সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে, দেখ সেই দলিলটাকে কি লেখা আছে। এই দেশের মালিক এই দেশের জনগণ। এই দেশের মালিক কোনো ব্যক্তি না। তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী সবাইকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।’
এরইমধ্যে ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাচ্ছে এমন দাবি করে কামাল হোসেন বলেন, ‘এদেশের মানুষরা নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেন আমরা মালিক। তারা প্রশ্ন করে, আমরা কি করে মালিক ? আমাদের কথা তো কেউ শোনে না। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হন তারপর দেখেন শোনা যাবে কি যাবে না। এরইমধ্যে একটি ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাচ্ছে, এর মধ্যেই টনক নড়ে যাচ্ছে। শক্তভাবে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আসুন আমরা দাঁড়াই। আমার ওই চেয়ার নিয়ে বসতে হবে না, আছি দাঁড়িয়ে। যতক্ষণ প্রয়োজন দাঁড়িয়ে থাকব। যিনি এরকম কণ্ঠে কথা বলতে পারেন তিনি আমাকে সবসময় তার পাশে পাবেন।’
তরুণ সমাজের ওপর আক্রমণ এটা লজ্জার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রথম গণকবর কোথায় খোঁড়া হয়েছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলুন আমার সঙ্গে আমি দেখাব। প্রত্যেকটা শিক্ষককে টেনে টেনে বের করা হয়েছিল, আর পাইকারিভাবে ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছিল। প্রথম কাতারের মুক্তিযোদ্ধারা ছাত্র ছিলো না? তরুণ ছিল না? এই ইতিহাসকে কেন মুছে দেওয়া হবে? তাদের উত্তরসূরি আজকের ছাত্ররা। এই ছাত্ররা কোনো কিছু নিজের পকেট ভারি করার জন্য চাচ্ছে? কোনো লুটপাটের ভাগ চাচ্ছে? কোটার ব্যাপারে তাদের কথা হচ্ছে সংস্কার করো।’
কোনো কিছু পাওয়ার জন্য কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেনি উল্লেখ করে কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘আমার পরিষ্কার মনে আছে যখন আমরা স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু বললেন সবাইকে দুই লাখ টাকা দেব। অনেকেই আমার দেওয়া চেককে সঙ্গে সঙ্গে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। আমার ছেলে, আমার বাবা কি দুই লাখ টাকার জন্য জীবন দিয়েছিল? আমি গর্ব করে তা স্মরণ করি। যারা আজকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করে তারা এ কথা ভুলে গেছে যে মুক্তিযোদ্ধারা কি মানসিকতা নিয়ে যুদ্ধ করেছে। বাড়িঘর দেওয়া হয়েছে, আমরা বাড়ি ঘর পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করি নাই। ব্যবসা করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করি নাই। আমার ভালো ভালো ছাত্ররা, স্টার মার্কস পাওয়া ছাত্ররা ২৬ মার্চ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল, আমরা তার মৃতদেহ পর্যন্ত পাইনি। অদেরকে আমরা কি দিতে পেরেছি? শুধুমাত্র তারা যে দায়িত্ব দিয়ে গেছে তা যেন আমরা পালন করতে পারি। তারা জীবন দিয়ে গেল, স্বাধীনতা দিয়ে গেল আমরা যেন স্বাধীন দেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি।’
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় কয়লা চুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কয়লা চুরির পর কয়েকদিন পর মাটি চুরি হবে। চুরি করার আর জিনিস পেল না। লক্ষ্য করবেন চুরি ডাকাতির কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে কি না আমি প্রশ্ন রাখলাম।’
সারাবাংলা/এসএইচ/এমআই