Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কয়লার ধকল সামলাতে সরকারের ৬ সিদ্ধান্ত


৩১ জুলাই ২০১৮ ২২:৫৪

।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বড়পুকুরিয়া কয়লার খনির দুর্নীতির ধকল সামলাতে ছয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে দ্রুততম সময়ে কয়লা উত্তোলন করতে সব শ্রমিকের ছুটি বাতিল, কয়লা উৎপাদনের নিয়োজিত চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসিকে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া, খনির ফেস ডেভেলপমেন্ট ও ভূ-গর্ভস্থ রোডওয়ে নিমার্ণ কার্যক্রম চলাকালে উৎপাদিত কয়লা স্টক ইয়ার্ডে মজুদ না রেখে সরাসরি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এরই মধ্যে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা মজুত ক্ষেত্র (স্টক ইর্য়াড) থেকে কয়লা সরবরাহের গেট সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কয়লা খনি থেকে তোলা কয়লা বেসরকারি খাতে বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কয়লার বাস্তবভিত্তিক স্টক ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে যথাযথ মজুত ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং সমন্বিত কর্মপদ্ধতি প্রণয়নের মাধ্যমে ডিজিটাইজড পদ্ধতিতে কয়লা উৎপাদন, বিক্রি ও মজুতের বিষয়টি মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ২৭ জুলাই বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এবং পাশের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ শেষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের চার সদস্যের দেওয়া প্রতিবেদনে এসব সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। গত ২৯ জুলাই পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহর সই করা ওই প্রতিবেদন প্রতিমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে কথা বলতে জ্বালানি সচিব, বিদ্যুৎ সচিব ও পিডিবির চেয়ারম্যানের মঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কথা বলতে রাজি হননি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উচ্চ পর্যায়ের চার সদস্যের পরিদর্শনের সময় বড়পুকুরিয়া কয়লা কনির কোল স্টক ইর্য়াড পরিদর্শনে কয়লা ঘাটতি এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিষয়ে উপস্থিত খনির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরিদর্শন দল পর্যাপ্ত কয়লা মজুত না থাকার পরেও আগামী আগস্ট পর্যন্ত কয়লা সরবরাহের নিশ্চয়তা কিভাবে দেওয়া হলো- এ বিষয়ে জানতে চাইলে বড়পুকুরিয়া কর্মকর্তারা জানান, কয়লার উৎপাদন, বিক্রি ও মজুতের গাণিতিক যোগ-বিয়োগের ভিত্তিতে এবং কোল স্টক ইয়ার্ডের ১৭ একর পরিমাণ জায়গায় ২ থেকে ৩ ফুট পুরুত্বের কয়লার স্তর রয়েছে বিবেচনা করে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।

খনি কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, গত ১৪ মে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠিতে জানানো হয়, কোল স্টক ইয়ার্ডে আনুমানিক দুই লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুত রয়েছে এবং আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে খনি থেকে আরও ৮০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা উৎপাদিত হবে। পরে গত ২ জুলাই অন্য এক চিঠিতে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকৌশলীকে জানানো হয়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ফেইস ১২১০ডি থেকে চলতি কয়লা উৎপাদন গত ১৫ জুন শেষ হয়েছে। ওই ফেইস থেকে পরবর্তী ফেইসে যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কয়লা উৎপাদন শুরু করতে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। এ সময় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন বন্ধ থাকবে।

কয়লা ঘাটতির বিষয়ে পরিদর্শন দল খনি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, কয়লা উৎপাদনের পরিমাণ থেকে বিক্রি বিয়োগ করে মজুত হিসেব করা হয়েছে। কোল ইয়ার্ড কোনো সময়ের জন্য সম্পূর্ণ খালি হয়নি বিধায় মজুত কয়লার কখনও পরিমাপ করা হয়নি। তবে কয়লা স্টক ইয়ার্ডে কয়লার বিভিন্ন ধরনের সিস্টেম লস আছে।

কয়লা চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিদর্শন দলকে জানানো হয়, শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতিক্রম করে কয়লা চুরি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোল ইয়ার্ডের ভেতরে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য একটি মাত্র গেট রয়েছে এবং কোল ইয়ার্ডের চারদিকে আট ফুট উঁচু বাউন্ডারি ওয়াল ও তার ওপর ৩ ফুট উঁচু কাঁটাতারের বেস্টনী রয়েছে। কোনো ইয়ার্ডের নিরাপত্তার জন্য খনির গেট ও চারদিকে পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রহরী তিন শিফটের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। রাতে আলাদা পাঁচ সদস্যের ভিজিলেন্স টিমের মাধ্যমে কোল ইয়ার্ডসহ পুরো মাইনিং এলাকা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। কোম্পানির মার্কেটিং ও সেলস ডিভিশন ডেলিভারি আদেশ দিয়ে কয়লা সরবরাহের অনুরোধ জানালে তা যাচাই করে খনি এলাকায় ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতিক্রম করে কয়লা চুরি করা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, আগামী ১০ আগস্ট খনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ফেইস ডেভেলপমেন্ট ও ভূ-গর্ভস্থ রোডওয়ে নিমার্ণ কার্যক্রম চলার সময় একশ থেকে দেড়শ মেট্রিক টন, ১১ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন ৩০০ মেট্রিক টন এবং এক সেপ্টেম্বর থেকে দৈনিক দেড় হাজার থেকে দুই হাজার সেট্রিক টন কয়লা উৎপাদিত হতে পারে।

আরও পড়ুন-

কয়লায় তুলকালাম

কয়লা ঘাটতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক

‘সিরাজগঞ্জ থেকে বিদ্যুৎ দিয়ে রংপুরের ঘাটতি পূরণ’

সারাবাংলা/এইচএ/টিআর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর