যৌন হয়রানিতে জিরো টলারেন্স
৩১ জুলাই ২০১৮ ২৩:২৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: নির্ভয়ে অভিযোগ করুন, যৌন হয়রানির বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতিতে অটুট থাকবে বলে জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধকল্পে গঠিত কমপ্লেন্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান।
আজ মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে বিএসএমএমইউেএর কমপ্লেন্ট কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি অশোভন আচরণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নারী-পুরুষ বিভাজন নয়, প্রশ্ন অধিকার ও মর্যাদার। আর তা নিশ্চিত করতে সম অধিকার, বৈষম্যহীন, মর্যাদাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির সমাজ প্রতিষ্ঠা জরুরি। তিনি আরও বলেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরণের অভিযোগসমূহকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, নারীরা সমাজের অর্ধেক, সকল ক্ষেত্রেই নারীর সমান ক্ষমতায়, সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। প্রয়োজন একটি অসাম্প্রদায়িক যুক্তিবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার। যেখানে নারীরা তাদের পূর্ণ অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করবেন এবং দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
আয়শা খানম আরও বলেন, আমরা সবাই মানব সন্তান হিসেবেই জন্মগ্রহণ করি, কিন্তু সমাজ নারী হতে শেখায়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ও পুরুষতান্ত্রিকতা নানাভাবেই নারীদেরকে পিছিয়ে রেখেছে। এ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে পরিবর্তনের জন্য সাবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। নারীদের প্রতি যৌন হয়রানিসহ সকল ধরণের সহিংসতা নির্মূল করতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষেদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, যৌন হয়রানি শুধুমাত্র শারীরিক স্পর্শেই হয় হয়ে থাকে তা নয়, অশালীন, অনৈতিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও হতে পারে। যদি কোনো শিক্ষক তাঁর ছাত্রীকে পরীক্ষায় নম্বরের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব দেয় সেটাও যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে।
২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি নির্দেশনামূলক রায় দেয়- সেই রায়ে হাইকোর্ট একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ণেরও নির্দেশনা দেয়। কিন্তু যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশনা এখনো বেশিরভাগ মানুষ জানেন না-মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজিবি ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, তাই জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে যেনো হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশনাসমূহ মানুষকে জানানো জরুরি।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরও বলেন, মানুষ যখন যৌন হয়রানির জন্য আত্মহননের পথ বেছে নেন তখন বুঝতে হবে কতটা অপমানিত বোধ করলে একজন মানুষ এটা করে থাকেন। তাই যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো অবহেলা না করে এর জন্য সচেতন হতে হবে ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। একইসঙ্গে কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনামূলক রায়টি মানুষকে বেশি করে জানাতে হবে।
বিএসএমএমইউর সাবেক ডিন ও কমপ্লেন্ট কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, কর্মস্থলে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ সকল ধরণের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।
কর্মশাল পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান।
অনুষ্ঠানে উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, সাবেক উপউপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ আল হারুনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/জেএ/এমআই